“মায়াপুরের ইসকন মন্দির---- এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা”
বাঙ্গালীদের অতিপ্রিয় তীর্থস্থান নবদ্বীপ. মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্য দেবের জন্মস্থান এটি. নবদ্বীপ থেকে অল্প দূরে মায়াপুর. মায়াপুর আজ আন্তর্জাতিক তীর্থকেন্দ্র. সমস্ত সম্প্রদায় মানুষের কাছে মায়াপুর পবিত্র তীর্থস্থান. ইসকনের মন্দিরের জন্যই মায়াপুরের খ্যাতি আজ বিশ্ব জোড়া. এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন আচার্য শীল অভয়চরণ ভক্তিবেদান্ত স্বামী.
আজ ইসকনের মন্দির এর প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ ভিড় করেন. ইসকন মন্দিরের প্রধান ফটকের ভিতরে প্রবেশ করলে প্রথমেই দেখতে পাবেন ঘরের একটি ঘর. এই কুটিরে আছে গৌড় নিতাই ও শীল প্রভুপাদের বিগ্রহ. সমগ্র মায়াপুর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য মঠ . প্রতি মঠে রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ. ইসকনের মেনগেট থেকে 100 মিটারের মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত চন্দ্রোদয় মন্দির. ইতিমধ্যে মন্দিরটি আন্তর্জাতিক খ্যাতি লাভ করেছে. মন্দিরটি নির্মাণ করতে কয়েক লক্ষ মার্কিন ডলার খরচ হয়েছে. মায়াপুরের মূল আকর্ষণ এই মন্দির. এখানে রয়েছে মূলত রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ. সঙ্গে অষ্টসখী, সামনে প্রভুপাদের মূর্তি ওপাশে নৃসিংহ ভগবানের মূর্তি. পাশের মন্দিরে রয়েছে পঞ্চতন্তের বিগ্রহ. এই মন্দিরে কিছু সময় কাটালে এক পারি জাতিক শান্তি পাওয়া যায়.
ইসকনের মন্দির টি অত্যাধুনিক ভাবে নির্মিত. মন্দিরের মধ্যে রয়েছে শঙ্খ ভবন, চন্দ্র ভবন, ভবন ও পদ্মভবন. এছাড়া রয়েছে বংশী ভবন, প্রভুপাদ ভবন, চৈতন্য ভবন, নিত্যানন্দ কুটির ও গৌরাঙ্গ কুটির. এখানে মোট 45 টি বিভাগ রয়েছে. মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ 108 ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট প্রভুপাদের সুবিশাল সমাধি মন্দির. মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরের কারুকার্য অসাধারণ. মন্দিরের বাইরে টেরাকোটার কাজ দেখলে চোখ ফেরানো দায়.
মন্দিরের মধ্যে রয়েছে এক সুবিশাল ঘোরানো সিঁড়ি. যা দিয়ে অতি সহজে মন্দিরের উপরে উঠে যায়. মন্দিরের ভিতরে রয়েছে একটি সংগ্রহশালা. সেখানে প্রভুপাদের জীবনের নানা ঘটনা ও সংগ্রহ রাখা আছে. মন্দিরের একেবারে উপরে উঠলে দেখা যাবে গঙ্গার অনুপম দৃশ্য. সেই দৃশ্য দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়. মন্দিরের সামনে রকমারি ফুলের বাগান মন্দির এর সৌন্দর্য বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে. রাধামাধব মন্দিরের সামনে আছে লোটাস বিল্ডিং. সেখানে শীল প্রভুপাদের একটি ঘর আছে. সেই ঘরে শীল প্রভুপাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিস ও তার রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ রয়েছে.
ইসকনের আরেকটি দর্শনীয় জিনিস এখানকার আরতী প্রদর্শন. প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা ও রাত্রি বেলায় বিশেষ আরতী হয়. মন্দিরে ভোগ গ্রহণের ব্যবস্থা আছে.35,70,120 ঢাকার কুপন কেটে ভোগ সংগ্রহ করতে হয়. প্রতিদিন সাড়ে চারটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এবং বৈকাল 4:30 থেকে রাত্রি আটটা পর্যন্ত মন্দির খোলা থাকে. মন্দিরের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন খাবারের দোকান ,ওষুধের দোকান ও রেস্তোরাঁ.
মায়াপুরের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান গুরুকুল শিক্ষা কেন্দ্র.1972 সালে শীল প্রভুপাদ এটি প্রতিষ্ঠা করেন. এখানে ছাত্রদের বৈদিক শিক্ষা প্রদান করা হয়. গুরুকুলের পাশে রয়েছে একটি হাতিশালা. এখানে লক্ষ্মী পিয়া ও বিষ্ণুপ্রিয়া নামে দুটি হাতি আছে. গৌড় পূর্ণিমাতে প্রতি শনিবার শ্রী রাধা মাধবের বিগ্রহ কে হাতির পিঠে চাপিয়ে কীর্তন সহকারে নগর পরিক্রমা করা হয়.
মায়াপুরের দোল পূর্ণিমা খুবই আকর্ষণীয়. প্রায় এক মাস ধরে দোল উৎসব পালিত হয়. এই সময় দেশ-বিদেশ থেকে বহু ভক্ত এখানে ভির করেন. সমগ্র শহর খুবই সুন্দরভাবে সেজে ওঠে.
চন্দ্রোদয় মন্দির এর পাশে আরেকটি সুবৃহৎ মন্দির নির্মিত হচ্ছে. এটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মন্দির হতে যাচ্ছে. মন্দিরটি উচ্চতা 380 ফুট. খুব শীঘ্রই মন্দিরটির উদ্বোধন হবে.
কিভাবে যাবেন... হাওড়া থেকে কাটোয়া যাওয়া যেকোন ট্রেন ধরুন. নামুন নবদ্বীপ ধাম স্টেশনে. সেখান থেকে রিক্সায় করে বড়াল ঘাট. নৌকায় করে মায়াপুর হুলার ঘাট. সেখান থেকে রিকশায় করে ইসকন মন্দির. শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ও মায়াপুর যাওয়া যায়. কৃষ্ণনগর লোকাল বা লালগোলা প্যাসেঞ্জারের চেপে কৃষ্ণনগর. এখান থেকে বাসে করে ইসকন মন্দির যাওয়া যায়. এছাড়া সরকারি বা বেসরকারি বাসের সহজে আসা যায়. কলকাতা থেকে মায়াপুর এর দূরত্ব মাত্র 140 কিমি.
কোথায় থাকবেন... মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে থাকার বন্দোবস্ত রয়েছে. থাকার জন্য যোগাযোগ করতে হবে গ দা ভবনে. রুম রিজার্ভেশন এর জন্য যোগাযোগ এর নাম্বার..(0347- 245620). সব ধরনের রুম এখানে পাওয়া যায়. ভাড়া 400 -2400 টাকা. মন্দিরের বাইরে থাকার জন্য প্রচুর হোটেল ও লজ আছে. দিনের ছুটিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সারা দিন মায়াপুর ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় আবার বাড়ি ফেরা যায়. শ্রীচৈতন্যদেবের এই পবিত্র জন্মস্থানে একবার এলে মনে এক অলৌকিক শান্তি পাওয়া যায়.
0 মন্তব্যসমূহ