Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

Responsive Advertisement

“বৃষ্টি মুখর দিনে জয়পুর জঙ্গল ভ্রমণ” (Joypur Forest )

 “বৃষ্টি মুখর দিনে জয়পুর জঙ্গল ভ্রমণ”


ভ্রমণের নেশা আমার ছোটবেলা থেকেই. স্কুলে পড়ার সময় থেকেই স্কুল থেকে ফিরে বিকাল বেলায় সাইকেল নিয়ে কখনো বা একা কখনো বা বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে পড়তাম কাছাকাছি কোন নির্জন স্থানের উদ্দেশ্যে. প্রকৃতি আমাকে বারবার আকর্ষণ করে. শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে মাঠ ঘাট এর প্রতি আমার আকর্ষণ বেশি. বড় হয়েও সেই নেশা থেকে গেছে. প্রতি বছর বন্ধু-বান্ধব মিলে দু-একবার কখনো সমুদ্রের উদ্দেশ্যে, কখনো পাহাড় দেখতে, কখনো বা ঐতিহাসিক স্থান দেখতে বেরিয়ে পড়তাম. দীর্ঘ ক'বছর ধরে বেশ চলছিল. ছন্দপতন হলো দুই হাজার কুড়ি সালে(2020).  করোনা ভাইরাস সারাবিশ্বে মরন থাবা বসানোই সবকিছু উল্টো পাল্টা হয়ে যায় . স্তব্ধ হয়ে যায় সভ্যতার চাকা. মানুষের ঘোরাঘুরি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়. অনেকদিন গৃহবন্দি থাকায় মন 

 হাঁপিয়ে উঠেছিল. এই বছর এপ্রিলের পর থেকে করোনার প্রভাব কমতে শুরু করে. শ্রাবণের শেষ রবিবার কর্মব্যস্ত জীবনে সামান্য একটু ফাক পেতে বাইকে করে দুই বন্ধু মিলে বেড়িয়ে পড়লাম জয়পুর জঙ্গল এর উদ্দেশ্যে. রবিবার বিকেল পাঁচটায় বেরিয়ে পড়লাম. বিষ্ণুপুর থেকে দূরত্ব মাত্র 14 কিমি. কাল মেঘরাশি আকাশ ঢেকে রেখেছে. ভয় হচ্ছিল যদি বৃষ্টি এসে আমাদের পরিকল্পনা নষ্ট করে. যদিও রেইনকোট সাথেই ছিল. শহর ছাড়িয়ে বাই পাসের পথ ধরতে ঝিরঝির করে বৃষ্টি শুরু হল. হালকা বৃষ্টিতে ভিজতে ভালই লাগছিল. জয়পুর ঢোকার মুখে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো. ভাগ্য ভাল সামনে বনলতা রিসোর্ট ছিল. সেখানেই আশ্রয় নিলাম. না হলে কাকভেজা হয়ে যেতাম. দুকাপ কফি অর্ডার দিলাম. গরম গরম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম. সবুজ শাল, সেগুন, পিয়ালের পাতার উপর বৃষ্টির ধারা অসাধারণ লাগছিল. মিনিট কয়েক পর বৃষ্টি থামতে আমরা আবার বেরিয়ে পড়লাম. বিষ্ণুপুর- আরামবাগ রাজ্য সড়কের দু'পাশে কয়েক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে জয়পুর জঙ্গল. আগে জঙ্গলের ঘনত্ব অনেক বেশি ছিল. দূরদূরান্ত শুধু বিশাল বিশাল গাছ আর গাছ . সাল, সেগুন ,পিয়াল গাছ এই জঙ্গলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে. এইখানে এসে আপনি জঙ্গল সাফারি স্বাদ নিতে পারবেন. বাইকে করে আমরা জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করলাম. গাছের পাতা থেকে বৃষ্টির জল টপ করে ঝরে পড়ছিল. জয়পুর জঙ্গলে  মাঝে মাঝে হাতির দল কে দেখতে পাওয়া যায়. এই হাতির দল দলমা পাহাড় থেকে এইখানে আশ্রয় নেয়. তাই গভীর জঙ্গলে প্রবেশ না করাই ভালো. জয়পুর জঙ্গলে প্রচুর হরিণ আছে. ভাগ্য ভালো থাকলে হরিণের দেখা পেতে পারেন. দেখা পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির পাখি. জঙ্গলের মধ্যে কিছুটা প্রবেশ করতেই কংসাবতী ক্যানেল. হরিণের দল এই ক্যানেলে জল খেতে আসে .  জয়পুর জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে একটি ওয়াচ টাওয়ার. এখান থেকে  পুরো জঙ্গলটা খুব সুন্দর দেখতে লাগে. এবার আমরা গেলাম সমুদ্র বাঁধ. জয়পুরের এই  বাঁধ এর আয়তন বিশাল. এইখানে বোটিং  এর ব্যবস্থা আছে. করোনার জন্য যদিও তা বন্ধ.  বাঁধকে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে. শীতকালে প্রচুর মানুষ এইখানে পিকনিক করতে আসেন.


এরপর আমরা গেলাম গোকুলনগর গোকুল চাঁদ মন্দিরটি দেখতে .. জয়পুর থেকে দূরত্ব মাত্র চার কিমি. গোকুল চাঁদ মন্দিরটি মাকরা পাথর দিয়ে নির্মিত. মন্দিরটি বাঁকুড়া জেলার সবচেয়ে বড় মাকরা পাথর দিয়ে নির্মিত মন্দির. মলল রাজ প্রথম রঘুনাথ সিং এই মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন. মন্দিরটি প্রায় 64 ফুট উঁচু.23500 স্কয়ার ফুট এলাকাজুড়ে মন্দিরটি বিস্তৃত. মন্দিরের মধ্যে রয়েছে একটি নাট চালাও রন্ধনশালা. জয়পুরের প্রধান আকর্ষণ এই মন্দির. দোল উৎসব এ এখানে পাঁচ দিন ধরে মেলা হয়, রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ পূজিত হয়.


এর পর আমরা গেলাম বাসুদেবপুর চাতাল বা এয়ার ডোম. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ বাহিনী যুদ্ধবিমান ওঠানামার জন্যে এখানে এয়ার বেস নির্মাণ করেছিল. তাদের বানানো সেই রানওয়ে আজও অক্ষত.রানওয়ে  টির দৈর্ঘ্য  1.7 কিমি. রানওয়ের দুপাশে শাল, সেগুন এর গভীর জঙ্গল . শীতকালে বহু মানুষ এখানে পিকনিক করতে আসে.


কিভাবে যাবে... কলকাতা থেকে বাসে করে বিষ্ণুপুর ঢোকার আগে পড়বে জয়পুর জঙ্গল. বাস থেকে আপনি জঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন. জঙ্গলের ধারে বনলতা রিসোর্টে থেকেও আপনি জয়পুর জঙ্গল ঘুরে দেখতে পারেন. সবচেয়ে ভালো হয় ট্রেনে বা বাসে করে চলে আসুন বিষ্ণুপুর. এখানে সরকারি টুরিস্ট লজ এর পাশাপাশি ছোট-বড় অনেক বেসরকারি লজ হোটেল আছে. ঐতিহাসিক শহর বিষ্ণুপুর একদিন ঘুরে দেখুন . পরেরদিন টোটো ভাড়া করে ঘুরে আসুন জয়পুর জঙ্গল, গোকুল চাঁদ মন্দির, সমুদ্র বাঁধ, বাসুদেবপুর চাতাল বা এয়ার ডোম.


অন্যান্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লেখা-----


1) ইতিহাস ও ধর্মের অসাধারণ মেলবন্ধন: উজ্জয়িনী.click Here 👉https://worldvraman.blogspot.com/2022/08/ujjain.html


2) উড়িষ্যার কাশ্মীর দারিংবাড়ি....https://worldvraman.blogspot.com/2022/01/daringbadi.html


3) পাখিদের স্বর্গরাজ্য চুপির চর....https://worldvraman.blogspot.com/2021/11/chupir-char-purbasthali.html

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ