Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

Responsive Advertisement

ব্যারাকপুরে একটা দিন/Barrackpore Tour

 


             ব্যারাকপুরে একটা দিন

                      Barrackpore Tour 


 ব্যারাকপুর দিশা আই হসপিটাল এ মাঝেমধ্যে চোখের চেকআপের জন্য যেতে হয়. প্রত্যেকবার ডক্টর দেখাতে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ায় কোনদিনই ব্যারাকপুর শহরটি ঘোড়ার সুযোগ হয়নি. কারণ বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরার তারা থাকে. কোন কারণে ট্রেন মিস করলে খুবই সমস্যায় পড়তে হবে ় বলে ইচ্ছা থাকলেও ব্যারাকপুরের কোথাও ঘোড়া হয় নি এতদিন. এবার সকাল দশটার মধ্যে চেকআপ হয়ে যাওয়ায় হঠাৎ ব্যারাকপুর এর দর্শনীয় স্থানগুলি দেখার পরিকল্পনা করে ফেলি. নভেম্বর মাসের শেষ, অল্প অল্প ঠান্ডা পড়েছে.  করোনা পরবর্তী ব্যারাকপুরে আগের সেই ভিড় এতটা নেই. সব টেন না চলার ফলে স্টেশন চত্বরে প্রায় ফাঁকা. ইন্টারনেট ঘেটে ব্যারাকপুর এর দর্শনীয় স্থানগুলি কথা আগে জেনেছিলাম. ঐতিহাসিক এই সহরে অনেকগুলি দর্শনীয় স্থান রয়েছে. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যুক্ত এই প্রাচীন শহরটি ঘুরে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল. সেই সুযোগ এবার হঠাৎ করেই পেয়ে গেলাম. হাতে চার-পাঁচ ঘণ্টা সময়. সেইমতো পরিকল্পনা করে বেরিয়ে পড়লাম ব্যারাকপুর দর্শনে. দিশা আই হসপিটাল টি স্টেশনের খুব কাছে হওয়ায় স্টেশনের বাইরে একটি দোকানে টিফিন সেরে একটি টোটো ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লাম.


ব্যারাকপুর পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাচীন শহর. গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এই ছোট্ট শহর টি 1857 সালে সিপাহী বিদ্রোহের জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠে. সিপাহী বিদ্রোহ ছাড়া ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে ব্যারাকপুর এর নাম বারবার জড়িয়েছে. রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘদিন এই শহরে ছিলেন. একসময় ব্যারাকপুর ব্রিটিশদের আস্তানা ছিল. এটি ছিল ব্রিটিশদের প্রথম মিলিটারি ক্যাম্প.


অন্নপূর্ণা মন্দির (Annapurna Mandir) .... প্রথমে আমরা গেলাম মা অন্নপূর্ণা মন্দির. রানী রাসমনির ছোট কন্যা জগদম্বা দেবী এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন. প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় এখানে আরতি হয়. আর দুপুরে ভোগের ব্যবস্থা আছে. মন্দিরটি অবিকল দক্ষিণেশ্বরে কালী মন্দিরের মতো দেখতে. স্থানীয় এক ব্যক্তি আমাদের জানালেন এই মন্দির সৃষ্টির প্রাচীন ইতিহাস.1847 সালে রানী রাসমণি পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে কাশির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন. যাত্রাপথে রাত্রিবেলা মা কালীর স্বপ্নাদেশ পান. দেবী তাকে গঙ্গার ধারে মন্দির নির্মাণ করে নিত্য পুজো করার নির্দেশ দেন. সেইমতো রানী গঙ্গার পূর্বপাড়ে দক্ষিণেশ্বরে ভবতারিণী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করেন. কাশির অন্নপূর্ণা দেবী দর্শন  এ বিঘ্ন ঘটায় রাসমনির জামাই ় মথুরামোহন বিশ্বাসের ইচ্ছে ছিল দেবী অন্নপূর্ণার মন্দির প্রতিষ্ঠা করা. জীবিত কালে তার সেই ইচ্ছে পূর্ণ না হলেও তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী জগদম্বা দেবী এই অন্নপূর্ণা মন্দিরটি নির্মাণ করেন. এই মন্দিরের নিত্য পুজোয় মাছ থাকা আবশ্যক.


জহর কুঞ্জ.(Jawahar Kunja) ..  অন্নপূর্ণা মন্দির দেখে এবার আমরা গেলাম জওহর কুঞ্জ. অন্নপূর্ণা মন্দির থেকে এর দূরত্ব মাত্র 10 মিনিট. ব্যারাকপুরের দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে জওহর কুঞ্জ অন্যতম. এটি মূলত একটি পিকনিক স্পট. শীতকালে বহু মানুষ এখানে পিকনিক করতে আছেন.জহর  কুঞ্জের ভিতর রয়েছে একটি সুন্দর বাগান ও শিশুদের খেলার নানা সামগ্রী.


গান্ধী ঘাট (Gandhi Ghat) .. জহর কুঞ্জ দেখার পর  আমরা গেলাম গান্ধী ঘাট. জহর কুঞ্জের কাছে গান্ধী ঘাট. হেঁটে যাওয়া যায়. এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান. মহাতমা গান্ধী এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে ছিলেন. তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই ঘাঁট টি নির্মাণ করা হয়. জহরলাল নেহেরু এই ঘাটতি উদ্বোধন করেছিলেন. গঙ্গার তীরবর্তী এই স্থানটি সময় কাটানোর পক্ষে আদর্শ. এখানে রয়েছে গান্ধীর উদ্দেশ্যে বানানো স্মৃতিসৌধ.


লেডি ক্যানিং এর কবর (Tomb Of Lady Canning) ... গান্ধী ঘাট থেকে মাত্র 10 মিনিটের লেডি ক্যানিং এর কবর. গভর্নর জেনারেল লর্ড ক্যানিং এর স্ত্রীর কবরস্থান এটি. বাংলার বহুপ্রচলিত মিষ্টি লেডিকেনি  নামটি এসেছে এই লেডি ক্যানিং নাম থেকে. লর্ড ক্যানিং তার স্ত্রীর মৃত্যুর পর হুগলি নদীর ধারে এই সমাধিসৌধটি নির্মাণ করেন. এটি একটি ঐতিহাসিক সৌধ. প্রতিবছর বহু পর্যটক এটি দেখার জন্য এখানে আসেন.


সেন্ট বার্থোলোমিউ ক্যাথিড্রাল (St. Bartholomew's Cathedral) .. এরপর আমরা গেলাম সেন্ট বার্থোলোমিউ ক্যাথি ডল. লেডি ক্যানিং এর কবর স্থান থেকে এর দূরত্ব মাত্র 12 মিনিটের মত.1847 সালে এটি তৈরি করা হয়. এখানে দেখার মত তেমন কিছুই নেই তবে এটি ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি প্রাচীন বিল্ডিং.


মঙ্গল পান্ডে পার্ক (Mangal Pandey Park) ..... ব্যারাকপুর এর দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে মঙ্গল পান্ডে পার্ক অন্যতম. সেন্ট বার্থোলোমিউ ক্যাথিড্রাল থেকে এর দূরত্ব মাত্র 10 মিনিট. ভারতের বিখ্যাত স্বাধীনতা সংগ্রামী মঙ্গল পান্ডের উদ্দেশ্যে এই পার্কটি বানানো হয়. ব্যারাকপুরের সেনাছাউনিতে মঙ্গল পান্ডে প্রথম সিপাহী বিদ্রোহের সূচনা করেন. যে গাছে মঙ্গল পান্ডে কে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সেই গাছটি এই পার্কে রয়েছে. গঙ্গা নদীর তীরে তৈরি এই মনোরম পার্কে প্রবেশ করার জন্য 10 টাকা প্রবেশ মূল্য দিতে হয়.


গান্ধী মিউজিয়াম -(Gandhi Museum) --আমাদের শেষ গন্তব্য গান্ধী মিউজিয়াম. মঙ্গল পান্ডে পার্ক থেকে এর দূরত্ব কুড়ি মিনিটের মত হাঁটাপথে. অটো বা বাসে করেও যাওয়া যায়. এটি একটি মহাত্মা গান্ধী রিসার্চ সেন্টার.  এখানে পাঁচটি গ্যালারি আছে. এখানে এলে দেখতে পাবেন প্রচুর দুষ্প্রাপ্য বই ও ছবি.


কখন যাবেন (Best Time For Travel) .. ব্যারাকপুর একটি ঐতিহাসিক শহর. কলকাতা থেকে দূরত্ব তাই একদিনই ঘুরে আসা যায়. শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা যেকোনো ঋতুতেই যাওয়া যায় তবে সবচেয়ে ভালো সময় হল শীতকালে যাওয়া.


কিভাবে যাবেন (How To Go) - হাওড়া থেকে সরাসরি ব্যারাকপুর যাওয়ার কোন ট্রেন নেই. শিয়ালদহ থেকে ব্যারাকপুর যাওয়ার ট্রেন পাওয়া যায়. সময় লাগে মাত্র 30 মিনিট. হাওড়া থেকে এলে প্রথম নামতে হবে তারকেশ্বর. সেখান থেকে নৌকা বা লঞ্চে করে ব্যারাকপুর. ধর্মতলা থেকে ব্যারাকপুর যাওয়ার  প্রচুর বাস পাওয়া যায়. পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে এলে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে চক্রধরপুর -  হাওড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন এ করে সকাল পাঁচটা নাগাদ হাওড়া স্টেশন  এ  নামুন. তারপর বাসে করে ব্যারাকপুর. সারাদিন ঘোরাঘুরি করে রাত্রিবেলা হাওড়া - চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেনে বাড়ি ফিরুন.


কোথায় থাকবেন (Where you Stay) .... একদিন ই সমস্ত ব্যারাকপুর ঘুরে রাত্রিবেলায় বাড়ি ফেরা সম্ভব. রাজ্যের অন্য জায়গা থেকে এলে ও. তবে এখানে থাকার জন্য অনেক ছোট বড় লঞ্চ ও হোটেল রয়েছে . রয়েছে প্রচুর গেস্ট হাউস. এখানে আপনি 400 টাকা থেকে রুম পেয়ে যাবেন.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ