“গোপালপুর সমুদ্র সৈকতে একদিন”
এই বছর বঙ্গের প্রতি একটু বেশি সদয়. বছরের তুলনায় এই বছর পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে ভালই. কাজের তো শেষ নেই, করোনার জন্য আর ঘরে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিলো না. শেষ পর্যন্ত আগস্টের শেষ সপ্তাহে একটি ব্যাগে কিছু জামাকাপড় ,কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে পৌছে গেলাম স্টেশন. বিকেল চারটে নাগাদ পৌছালাম ব্রহ্মপুর স্টেশন. সমস্যা হল স্টেশন থেকে গোপালপুর সী বিচ যেতে. অটো খুব বেশি ভাড়া চাইতে লাগলো. হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম মেন রোড . শেয়ার অটোতে করে পৌঁছে গেলাম বাস স্ট্যান্ড. একটু কষ্ট করে না হাঁটলে অনেকগুলো টাকা বাড়তি খরচ হত. বাসস্ট্যান্ডে এসে এক দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলাম গোপালপুর সী বিচ কিভাবে যাওয়া যাবে? ভদ্রলোক জানালেন সি বিচ যাবার বাস আছে. ভাড়া মাত্র 15 টাকা তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে. কিছুক্ষণ পর একটি বাস এলে তাতে উঠে পড়লাম.
মাত্র 15 টাকা খরচ করে পৌঁছে গেলাম গোপালপুর সী বিচ. গোপালপুর তো পৌঁছে গেলাম কিন্তু থাকবো কোথায়? হোটেল তো আগে থেকে বুক করিনি. রাত্রি প্রায় আটটা বেজে গেছে. একটার পর একটা হোটেল ঘুরতে লাগলাম কিন্তু কোথাও কম পয়সার রুম খালি নেই.2000-2500 টাকার নিচে কোথাও রুম নেই. শেষ পর্যন্ত স্থানীয় এক বয়স্ক ভদ্রলোক এর সাহায্যে 500 টাকার একটি রুম পেলাম. হোটেলটি সি বিচের সামনে. বারান্দা থেকে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়. খুব সুন্দর বাতাস বইছিল. সমুদ্রের ধারে হোটেল গুলিতে কেন এসি রুমের প্রয়োজন হয় তা আমি বুঝতে পারলাম না. বারান্দায় বসে রাতের খাবার খেতে খেতে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাগলাম. সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছিল. সমুদ্রের কি ভীষণ গর্জন.
শরীর খুবই ক্লান্ত ,সহজে ঘুমিয়ে পড়লাম. খুব ভোর ভোর উঠে চলে গেলাম সমুদ্রের ধারে. সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখব বলে. সমুদ্রের বুক চিরে সূর্যোদয়ের দৃশ্য অসাধারণ. প্রচুর মানুষ এই দৃশ্য দেখার জন্য সমুদ্রের তীরে জড়ো হয়েছে. ভাগ্য ভালো আকাশে কোন মেঘ ছিল না. সূর্যোদয়ের দৃশ্য ভালোই উপভোগ করা গেল. মোবাইলে ক্যামেরাবন্দী করে রাখলাম সেই দৃশ্য. সমুদ্রসৈকতে একটু হাঁটাহাঁটি করে হোটেলে ফিরে এলাম. ব্যালকনিতে বসে গরম গরম চা খেতে খেতে সমুদ্রের দৃশ্য দেখতে লাগলাম. ব্রেকফাস্ট করে চলে গেলাম সমুদ্রস্নানে. সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে খেলা করতে ভালোই লাগছিল . বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে সমুদ্র থেকে উঠে এলাম. গোপালপুরে অ্যাডভেঞ্চার সব উপকরণই মজুদ. ওয়াটার বাইক, প্যাডেল বোট , প্যারা সাইক্লিং, প্যারা গ্লাইডিং সব কিছু এখানে মজুদ.
গোপালপুরের সমুদ্র সৈকত খুব সুন্দর করে সাজান. সমুদ্রের ধার বরাবর বাঁধানো. অনেকটা ভাইজাক এর মত. বসার জন্য রয়েছে চেয়ার. এখানে বসে আপনি সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন. সমুদ্রের ধারে রয়েছে প্রচুর সি ফুডের দোকান. দামু খুব অল্প. আর রয়েছে ঝিনুক দিয়ে বানানো বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান. ঘর সাজানোর শখ থাকলে এখান থেকে বিভিন্ন জিনিস কিনতে পারেন. দাম বেশি নয়.
কিভাবে যাবেন.. গোপালপুর উড়িষ্যার একটি জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট . হাওড়া শিয়ালদা থেকে গোপালপুর যাবার প্রচুর ট্রেন রয়েছে. তাদের মধ্যে কয়েকটি হল ফলকনামা এক্সপ্রেস, ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস, করমন্ডল এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেল. কল পূজার জন্য আপনাকে নামতে হবে ভোগপুর স্টেশনে. রিকশা করে চলে আসুন বাস স্ট্যান্ড. গোপালপুর সমুদ্রসৈকত যাবার বাস পেয়ে যাবেন. ঘন্টায় ঘন্টায় সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়ে. দূরত্ব মাত্র 16 কিঃমিঃ. অটো বা টেকারে করেও গোপালপুর সী বিচ এ যাওয়া যায়.
কোথায় থাকবেন.... গোপালপুর সমুদ্র সৈকতের ধারে প্রচুর নানা দামের এসি- নন এসি হোটেল আছে. আপনার বাজেট অনুযায়ী হোটেল ঠিক করতে পারেন. হোটেল থেকে সমুদ্রের সৈকত এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়. হাতে দু একদিনের ছুটি থাকলে অতি অবশ্যই একবার গোপালপুর ঘুরে আসতে পারেন. নতুন এক অভিজ্ঞতা লাভ করবেন.
অন্যান্য কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লেখা-----
1) ইতিহাস ও ধর্মের অসাধারণ মেলবন্ধন: উজ্জয়িনী.click Here 👉https://worldvraman.blogspot.com/2022/08/ujjain.html
2) উড়িষ্যার কাশ্মীর দারিংবাড়ি....https://worldvraman.blogspot.com/2022/01/daringbadi.html
3) পাখিদের স্বর্গরাজ্য চুপির চর....https://worldvraman.blogspot.com/2021/11/chupir-char-purbasthali.html
0 মন্তব্যসমূহ