. “ পাখিদের স্বর্গরাজ্য-- চুপির চর ”
অক্টোবর মাসের শেষ থেকেই হালকা শীতের আমেজ মালুম হচ্ছে. বাতাসে হিমের পরশ আর ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু মন ভালো করে দেয়. শীতকাল এলেই ওরা আবার ফিরে আসে. আছে সদলবলে পরিবার-পরিজন নিয়ে. প্রতিবছর তাই হয়. এই নিয়মের কোন হেরফের হয় না. কোন ভুল হয়না এদের. না, কোন মানুষের কথা বলছি না. এরা হলো পরিযায়ী পাখির দল. নভেম্বর মাস এলে চুপির চরে এসে হাজির হয় হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির দল. বর্ধমানের পূর্বস্থলীর চুপি যেন পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গরাজ্য. পুরো শীত কাল জুড়ে অজস্র পরিযায়ী পাখির দল এখানে বাসা বাঁধে. বেশ কয়েক বছর ধরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি শীতকালীন আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে বর্ধমানের ভাগীরথীর বিস্তীর্ণ জলাভূমি কে. আজ থেকে প্রায় ত্রিশ চল্লিশ বছর আগে এই জলাভূমি ছিল ভাগীরথীর মূল স্রোত. তারপর প্রাকৃতিক নিয়মে প্রায় 10 কিলোমিটার এই অংশটি জলাভূমিতে পরিণত হয়.
এই জলাভূমির একদিকে বর্ধমান অন্যদিকে নদীয়া. প্রায় তিন বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা এই জলাভূমি আজ চুপির চর নামে পরিচিত. শীত পড়লে রাশিয়া, সাইবেরিয়া, লাদাখ ,চীন, ইউরোপ থেকে বহু পরিযায়ী পাখি এখানে এসে বাসা বাঁধে. পিনটেল, কমন কুট, নর্দান, পপিল হেরণ , প্রভৃতি পাখির ডাকে এখানকার পরিবেশ মুখরিত হয়ে ওঠে. নীল আকাশের বুকে পাখিদের ডানা মেলে উড়ে যাওয়া, জলাভূমির জলে পাখিদের জলক্রীড়া, ভাসমান কচুরিপানা উপর পাখিদের বিশ্রামের দৃশ্য আপনার চোখ কে আরাম দেবে.
চুপির চরে এলে দেখতে পাবেন লাদাখ তিব্বত থেকে আশা কমলা বাদামী রঙের চখাচখি দের খেলা. দেখতে পাবেন বালিহাঁসের দলকে. উত্তর পূর্বের ঠান্ডা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এসেছে এরা. ছাই রঙের বড় বড় ঠোট ওয়ালা কাল লেজের পাখির দলকে এখানে ছুটে বেড়াতে দেখতে পাবেন. এদের বাসস্থান মধ্য এশিয়া. আসের মতো পাখাওয়ালা পাখির সন্ধান ও পেতে পারেন.
পাখিদের মেলা দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে পূর্বস্থলীর চুপির চরে. পাখি দেখার পাশাপাশি ভাগীরথীর বুকে নৌ ভ্রমণ আপনার মনকে ভরিয়ে তুলবে. নৌ ভ্রমণের আনন্দ এখানে না এলে বুঝতে পারবেন না. নৌকা কাছে পৌঁছলে উড়ে যাবে ঝাকে ঝাকে পাখির দল. নয়নাভিরাম সেই দৃশ্য. এখানে থাকলে মনে হবে পাখি দের সাথে নীল আকাশে উড়ে যায়. ওয়াচ টাওয়ার থেকে দূর-দূরান্তের দৃশ্য অসাধারণ দেখতে লাগে. শীতকালে বহু মানুষ এখানে পিকনিক করতে আসেন. দিন দিন মানুষের আনাগোনা বাড়ায় পাখিদের শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে. পরিযায়ী পাখিদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে.
কিভাবে যাবেন...চুপির চর যাওয়ার জন্য নামতে হবে পূর্বস্থলী স্টেশন. হাওড়া থেকে পূর্বস্থলী দূরত্ব মাত্র 100 কিমি .সময় লাগে মাত্র তিন ঘন্টা. স্টেশন থেকে রিকশা, ভ্যান বা অটো পাবেন. ভাড়া কুড়ি টাকা. চুপির ঘাটের জন্য অপেক্ষা করছে সারি সারি নৌকা. এদের মধ্যে সরকারি স্বীকৃতি প্রাপ্ত নৌকা 19 টি. ঘন্টা চারেক গঙ্গার বুকে ভেসে বেড়ানোর পর চলে যান চরের বুকে পাখিদের রাজ্যে. নৌকা ভাড়া নিবে জনপ্রতি দেড়শ -দুশো টাকা.
কোথায় থাকবেন.... একদিনের ছুটি কাটানোর আদর্শ টুরিস্ট স্পট হলো চর. একদিনের মধ্যে আপনি এখানে ঘুরে আসতে পারবেন. আপনি চাইলে এখানে থেকে আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলি হোক ঘুরে আসতে পারেন. পূর্বস্থলী শহরে থাকার জন্য অনেক ছোট বড় নামিদামি হোটেল রয়েছে. নিজের বাজেট অনুযায়ী হোটেল বেছে নিতে পারেন.
0 মন্তব্যসমূহ