Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

Responsive Advertisement

অচেনা এক রাজবাড়ী -হদল নারায়ণপুর( Hadal Narayanpur Rajbari)

"অচেনা এক রাজবাড়ী -হদল নারায়ণপুর"

আমাদের আশেপাশে এত দর্শনীয় সুন্দর সুন্দর ঐতিহাসিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান আছে যা বেশিরভাগ মানুষই তাদের কথা জানেনা. নিকটের ওই স্থানগুলির কে অগ্রাহ্য করে আমরা অতি পরিচিত স্থানগুলি দেখতে ছুটে যায়.  অবহেলার চাদরে ঢাকা পড়ে ওই স্থানগুলি. মানুষ ও সরকারঃ প্রচেষ্টা করলে ওই স্থান গুলি ও জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারতো কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি. ফলে অনেক ঐতিহাসিক স্থান আজ কালের স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার পথে. এই রকম একটি অবহেলিত ঐতিহাসিক স্থান হল বাঁকুড়া জেলার হদল নারায়ণপুর রাজবাড়ি.


হদল  নারায়ণপুর রাজবাড়ির কথা অনেক আগেই  শুনেছিলাম. দেখার ইচ্ছা বহুদিনের. কিন্তু সেই সুযোগ হয় নি এতদিন. ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পরিকল্পনা করে ফেললাম রাজবাড়ি দেখার . কয়েকজন বন্ধু মিলে শীতের রবিবার বেরিয়ে পড়লাম বাইক ভ্রমণে. সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডায় ঘুম ভাঙতে দেরি  হওয়াই  আমাদের বেরোতে একটু দেরি হল. বিষ্ণুপুর থেকে হোদল নারায়নপুর এর দূরত্ব খুব বেশি নয় ,বড়জোর 40 - 45 কিমি. সকাল ন'টায় বাইকে করে বেড়িয়ে পড়লাম গন্তব্যর দিকে. প্রচণ্ড ঠান্ডায় হাত পা যেন জমে যাচ্ছে. কনকনে ঠান্ডায় শরীর যেন হিম করে দিচ্ছে. সোয়েটার টুপির আবরণ ভেদ করে ঠান্ডা বাতাস যেন কে কাঁপিয়ে দিচ্ছে. বিষ্ণুপুর বাইপাস পেরিয়ে দ্বারিকা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ. খুবই সাবধানে আস্তে আস্তে বাইক চালাতে হচ্ছিল. এতে সময় একটু বেশি লাগলেও কিছু করার নেই. প্রশাসনের উচিত এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দ্রুত সারিয়ে তোলা. প্রতিদিন প্রচুর মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে. রাধানগরে পৌঁছে একটা দোকানে গরম গরম চা ও তেলে ভাজা খেলাম. ঠান্ডায় চায়ের সঙ্গে গরম তেলে ভাজা অপূর্ব.


ঘণ্টা দেড়েকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম হোদল নারায়নপুর. পথচলতি মানুষকে জিজ্ঞেস করে পৌঁছে গেলাম প্রাচীন এই জমিদার বাড়ির সামনে. বাড়ির এত সামনে প্রাচীন এই জমিদার বাড়ি দেখে খুবই অবাক হয়ে গেলাম. এত সুন্দর ও কারুকার্যময় জমিদারবাড়ি একটি আদর্শ পর্যটনকেন্দ্র হয়ে উঠতে পারতো. এই ঐতিহাসিক স্থান আজও পর্যটকদের দৃষ্টির আড়ালে থাকার জন্য অবাক হতে হয়. স্থানীয় এক বয়স্ক ব্যক্তির কাছ থেকে এই জমিদার বাড়ির ইতিহাস জানতে পারলাম. মুচিরাম ঘোষ এই জমিদার বংশের সূচনা করেন. মলল রাজ গোপাল সিং এর রাজত্বকালে তিনি নীলপুর থেকে এখানে এসে বসবাস শুরু করেন. গোপাল সিংয়ের রাজদরবারে গণিতজ্ঞ শুভঙ্কর দাসের সঙ্গে মুচিরামের আলাপ হয়. শুভঙ্কর দাস মহারাজের সাথে মুচিরামের পরিচয় করিয়ে দেয়. অল্পদিনের মধ্যেই মুচিরাম নিজের প্রচেষ্টায় হোদল নারায়নপুর এর প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হন. পরে তিনি মন্ডল উপাধি লাভ করেন. জমিদারের পত্তন করে নীল চাষ করে এই  জমিদার প্রচুর টাকা উপার্জন করেন. নির্মাণ করেন সুবিশাল অট্টালিকা ও মন্দির. এক সময় রাজবাড়ীর যথেষ্ট ছিল তা সহজেই অনুমেয়. রাজবাড়ীতে রয়েছে পিতলের তৈরি বিশাল রথ. এখানকার রাস মঞ্চ দেখার মত.


গ্রমে প্রবেশ মুখে চোখে পড়ে একটি মন্দির. এটি ব্রাহ্মনী দেবীর মন্দির বলে পরিচিত. কষ্টিপাথরের তৈরি দেবীমূর্তি উচ্চতা 5 ফুট. এই মূর্তির পায়ে দু'পাশে এবং পিছনের খিলানে সব সূত্র পাঁচটি প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুন্ডের অনুকৃতি থাকে. একে পঞ্চকুন্ডা অগ্নি মধ্যস্থতা পার্বতী বলে অনুমান করা যেতে পারে. এই দেবীর ইতিহাস খুবই চিত্তাকর্ষক. গ্রামের লোককথা  অনুযায়ী মুড়ো কাটা চক্রবর্তী এই অঞ্চলের গাছের মুন্ডু কেটে এখানে বসতি স্থাপন করেন .তার বিধবা মেয়ে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে দামোদর নদ থেকে দেবী মূর্তি উদ্ধার করে দেবীর মন্দির  নির্মাণ করেন. একটি অন্য মত ও আছে. রানী ময়রা নামে এক তাম্বলি মহিলা দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীর কথামতো গ্রামের লোকজন নিয়ে গিয়ে দামোদরের জল থেকে দেবীর মূর্তি উদ্ধার করে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন. ব্রাহ্মনী দেবী হিসেবে দেবী প্রতিষ্ঠা লাভ করেন.


এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই দেখার মতো. শহরের ভিড়ভাট্টা থেকে এখানে কয়েকদিন কাটালে মন প্রাণ চাঙ্গা হয়ে উঠবে.


কোথায় থাকবেন - হোদল নারায়নপুর একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম .এখানে থাকার মতো ব্যবস্থা সেরকম নেই. ফলে এখানে দু-একদিন কাটানোর ইচ্ছে থাকলে তা সম্ভব নয় .কাছাকাছি থাকার জন্য হোটেল বা লজ পাবেন বিষ্ণুপুর বা সোনামুখীতে .বর্ধমান শহর এখান থেকে খুব কাছে. তবে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে বিষ্ণুপুরে থাকা. ঐতিহাসিক মন্দিরসমূহ বিষ্ণুপুরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন একদিন ঘুরে দেখে পরের দিন গাড়ি ভাড়া করে করে যেতে পারেন হোদল নারায়নপুর. রাজবাড়ী দেখে ফেরার পথে ঘুরে আসতে পারেন কাছাকাছি কয়েকটি দর্শনীয় স্থান.


কিভাবে যাবেন -- হোদল নারায়নপুর জায়গাটি পর্যটন মানচিত্র এ তেমন পরিচিত নাম নয়. বহু মানুষের কাছে এই রাজবাড়ী আজও অজানা. প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে যাবেন ?সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ট্রেনে করে চলে আসুন বিষ্ণুপুর. সমস্ত ট্রেনই বিষ্ণুপুরের স্টপেজ দেয়. এখান থেকে ছোট গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন হোদল নারায়নপুর .বাসে করে ও যাওয়া যায় .তবে  এই রুটে বাস  কম. ট্রেনে করে করেও যাওয়া যায়. সেক্ষেত্রে বাঁকুড়া থেকে মশাগ্রাম গামি ট্রেনে চেপে নামতে হবে ধগড়িয়া স্টেশনে. স্টেশন থেকে হোদল নারায়নপুর মাত্র 5 মিনিটের রাস্তা. স্টেশন থেকে রিকশা, ভ্যান বা টোটো তে করে সহজেই যাওয়া যায় হোদল নারায়নপুর রাজবাড়ি. বর্ধমান থেকে ও  ট্রেনে বা বাসে করে আসতে পারেন হোদল নারায়নপুর.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ