Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

Responsive Advertisement

ইতিহাসের সাক্ষী রাজগীর( Rajgir)

          ইতিহাসের সাক্ষী রাজগীর


যদি আপনি দু-একদিনের জন্য কাছেপিঠে কোথাও  ঘুরে আসতে চান, তাহলে আপনার প্রথম পছন্দ হবে প্রাচীন ইতিহাস সমৃদ্ধ রাজগীর. সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এক অসাধারণ শহর রাজগীর. পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজগীর এর দূরত্ব খুব বেশি নয় .আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য বিহারের রাজগীর অবস্থিত. প্রাচীন মগধ সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল এই শহর. বৌদ্ধ জৈন স্থাপত্যের ভরপুর শহরে প্রবেশ করলে মনে হবে ইতিহাস বুঝি এখানে থমকে আছে. পুরান মতে এই শহরের প্রতিষ্ঠাতা জরাসন্ধ. রত্নগিরি, উদয়গিরি, স্বর্ণ গিরি , ভৈরব গিরি আর বিপুলা গিরি -- এই পাঁচটি পাহাড়ে ঘেরা রাজগীর শহর.



রাজগীর যাবার সবচেয়ে ভালো সময় অক্টোবর- মার্চ মাস .এই সময় প্রচুর পর্যটন এখানে ভিড় করেন .আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে শীতের শুরুতে রাজগীরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলাম .আবহাওয়া রুক্ষ হলেও শীতের পরিবেশ বেশ উপভোগ্য .হাওড়া থেকে রাজগীর যাওয়ার সরাসরি ট্রেন আছে .গয়া থেকেও ছোট গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায় .গয়া থেকে রাজগীর এর দূরত্ব 70 কিমি. শহরটি পাহাড় দ্বারা ঘেরা বলে মৌর্য সম্রাট এখানে রাজধানী স্থাপন করে ছিলেন. পাহাড় ঘেরা রাস্তা দিয়ে উঠতে উঠতে মনে হতে বাধ্য আপনি বুঝি কোন স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করছেন....



প্রবেশ পথের প্রথমেই চোখে পড়বে সাইক্লোপিয়ান  ওয়াল . মৌর্য সম্রাটরা শহরকে শত্রু আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন .আরেকটু এগিয়ে গেলে আপনি দেখতে পাবেন রথের চাকার একটি  চিহ্ন --সাইনবোর্ডে লেখা এটি মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণের রথের চাকার দাগ .এরপর আমরা গেলাম বিম্বিসারের কারাগার দেখতে, জনশ্রুতি আছে অজাতশত্রু যখন পিতা বিম্বিসার কে বন্দি করেছিলেন তখন তিনি নাকি এখানে বন্দি থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন .এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই তিনি এইরূপ মত প্রকাশ করেছিলেন. এরপর গেলাম মনিয়ার মঠ ,এখানকার প্রধান দেবতা নাগরাজ. এছাড়া বহু দেবদেবীর মূর্তি এখানে রয়েছে .এর পরের গন্তব্য স্থল  “জরাসন্ধ কা আখড়া”--- এখানে নাকি জরাসন্ধ কুস্তি লড়াই করতেন. এরপরের দর্শনীয় স্থান “বেনুবন উদ্যান”. সম্রাট বিম্বিসার গৌতম বুদ্ধকে এই উদ্যানটি উপহার দিয়েছিলেন .উদ্যান একটি পুকুর আছে গৌতম বুদ্ধ নাকি এই পুকুরে স্নান করে এই উদ্যানের কোন গাছের নিচে বসে শিষ্যদের উপদেশ দিতেন.



এরপর গেলাম গৃধকট পাহাড়. এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরিসীম. এখানে ভগবান বুদ্ধ ধ্যান ও উপাসনা করতেন . শিষ্যদের উপদেশ দিতেন. রাজগীরের আরেকটি দর্শনীয় স্থান হল বৈভব পাহাড়ের পাদদেশের উষ্ণ প্রস্রবণ .যেখানে সপ্ত রানী গুহার পিছন থেকে বই আসে ধারার জল. রোপ ওয়ে চেপে পিস প্যাগোডা যাওয়ার অভিজ্ঞতা অসাধারণ. ঘোড়ার গাড়িতে করে ও পিস প্যাগোডা যেতে পারেন তবে রোপওয়েতে না চাপলে রাজগীরা আশা বৃথা . রোপ ওয়ে থেকে সমগ্র রাজগীর  শহর কে অসাধারণ সুন্দর দেখতে লাগে. 160 ফুট উঁচু পাহাড়ের মাথায় রয়েছে বিশ্ব শান্তি স্তুপ. স্তূপের গাঁয়ে চারটি সোনার বুদ্ধমূর্তি শোভিত. এই চারটি  মূর্তি বুদ্ধের জীবনের চারটি দশা বর্ণনা করে. প্রথমটি জন্ম , দ্বিতীয় টি বুদ্ধত্ব প্রাপ্তির ,তৃতীয় উপদেশ  প্রধান আর চতুর্থটি মহাপরিনির্বাণ. মন্দির থেকে কমাগত উচ্চারিত বৌদ্ধ স্তব এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে. এই রত্নগিরি পাহাড় থেকে সমগ্র রাজগীর শহরটিকে অপূর্ব দেখায়. এরপর গেলাম ঘোড়া  কটোরা লেক. সবুজ পাহাড়ে ঘেরা লেকের আয়তন বিশাল. স্বচ্ছ কাঁচের মতো লেকের জল. এখানে আপনি ভোটিংয়ের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন .একটি বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি নির্মাণ হচ্ছে .সমগ্র রাজগীর যেন ভগবান বুদ্ধের শান্তির বাণী প্রচার করছে. কিভাবে যে 3 দিন কেটে গেল কিছু বোঝা গেল না .ফেরার পথে কানে বাজছিল ভগবান বুদ্ধের শান্তির বাণী গুলি.

    

    


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ