Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

Responsive Advertisement

বৃষ্টি সিক্ত জয়চন্ডী পাহাড়( Joychandi Pahar, Purulia)

        “বৃষ্টি সিক্ত জয়চন্ডী পাহাড়”


করোনার প্রভাব একটু কমে  আশায় এবং দীর্ঘদিন কোথাও না যাওয়ার ফলে মনটা কোথাও একটু বেড়াতে যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়েছিল. প্ল্যান করলাম বাড়ির সামনেই আমাদের সকলের পরিচিত জয়চন্ডী পাহাড় এ  একটি দিন কাটাবো. যেমন ভাবা তেমন কাজ. আগস্টের শেষ রবিবার তিন বন্ধু মিলে বেরিয়ে পড়লাম জয়চন্ডী পাহাড় এর উদ্দেশ্য. রবিবার সকাল বেলায় পৌঁছে গেলাম বিষ্ণুপুর রেল স্টেশন. ধরবো খড়গপুর আসানসোল প্যাসেঞ্জার. রবিবার বলে অফিস যাত্রীদের ভিড় নেই. করোনার ফলে বেশীরভাগ ট্রেন বন্ধ থাকায়, বেশিরভাগ অফিস যাত্রী  এই ট্রেনটি ধরে থাকেন. কিন্তু রবিবার বলে নিত্যযাত্রীদের ভিড় ছিল না. লেট থাকায় ট্রেন এল 8:30 টাই .  সবুজ মাঠ ঘাট এর মধ্য দিয়ে ট্রেন ছুটতে লাগলো. এবছর বৃষ্টি ভালো হোয়াই চারদিকে সবুজ আর সবুজ. কচি কচি ধানের চারা বাতাসে দুলছে. আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা. বৃষ্টি সিক্ত দিনে ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস গায়ে লাগিয়ে ট্রেন জার্নি বেশ লাগছিল.আদ্রা স্টেশনে ট্রেন যখন ঢুকলো তখন প্রায় সাড়ে দশটা বাজে. স্টেশনের সামনে একটি দোকান থেকে হালকা টিফিন করে নিলাম.


আদ্রা স্টেশন  থেকে জয়চন্ডী পাহাড় যাওয়ার টোটো বা অটো পাওয়া যায়. আমরা একটি টোটো করে বেরিয়ে পড়লাম জয়চন্ডী পাহাড় এর উদ্দেশ্য.আদ্রা থেকে জয়চন্ডী পাহাড় এর দূরত্ব মাত্র চার কিমি. পৌঁছতে মিনিট 15 সময় লাগলো. জয়চন্ডী পাহাড় এর নামে একটি স্টেশন ও আছে. পাহাড়ের পাদদেশে নবনির্মিত স্টেশনটিকে দুর থেকে ছবির মত দেখতে লাগে.


জয়চন্ডী পাহাড় ছোটনাগপুর মালভূমির অংশবিশেষ. পাহাড়ের উচ্চতা   155 মিটার. পাহাড়ের উপরে একটি মন্দির আছে. জয়চন্ডী পাহাড় এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বিখ্যাত চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় তার “হীরক রাজার দেশে” সিনেমার শুটিং এখানে করেছিলেন. জয়চন্ডী পাহাড়কে কেন্দ্র করে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা বিশাল. পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের পর্যটন চিত্তে জয়চন্ডী পাহাড় কে তুলে ধরার জন্য প্রতি বছর জানুয়ারি মাসে এখানে জয়চন্ডী পাহাড় উৎসবের আয়োজন করে থাকে. জানুয়ারি মাসে এখানে বেড়াতে এলে পাহাড়ে ঘুরাঘুরির পাশাপাশি উৎসবের আনন্দ নিতে পারবেন. জয়চন্ডী পাহাড় এর টেকিং এর ব্যবস্থা আছে. অনেক পর্বতারোহী এইখানে পাহাড়ে ওঠার প্রশিক্ষণ নিতে আসেন. আগে কয়েকবার জয়চন্ডী পাহাড় এসেছি কিন্তু বর্ষাকালে এই প্রথম. বর্ষায় জয়চন্ডী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই দেখার মতো. চারিদিকে সবুজের সমাহারে মাঝে জয়চন্ডী পাহাড় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে. সত্যজিৎ রায় এর “হীরক রাজার দেশের” উদয়ন পণ্ডিতের পাঠশালাটি যদি পুনর্নির্মাণ করে পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়া হয় , তাহলে এই স্থানটি আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে.


জয়চন্ডী পাহাড় এর পাদদেশে পৌছালাম তখন আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা. সেই কালো মেঘ রাশির মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে জয়চন্ডী পাহাড়. অসাধারণ দেখতে লাগছিল সেই দৃশ্য. আর এই দৃশ্য দেখার জন্যই তো বর্ষাতে এখানে আসা. বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য সবরকম উপকরণই আমাদের ছিল. বর্ষাতি, ছাতা সব মজুর সুতরাং বৃষ্টির ভয় আমাদের ছিল না. পাহাড়ের গা বেয়ে রয়েছে সিঁড়ি. সেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয়. পাঁচশোর  বেশি সিঁড়ি সেখানে রয়েছে. এতগুলো সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে ওঠা সত্যিই খুব কষ্টকর. পাহাড়ে ওঠার জন্য অবশ্যই সঙ্গে জলের বোতল রাখুন. পাহাড়ের মাথায় রয়েছে মা জয়চন্ডী মন্দির. পাহাড়ের উপর থেকে দূরের শহরকে খুব সুন্দর লাগছিল. হালকা বৃষ্টিতে পাহাড়ের উপর ঘোরাঘুরি আলাদা অ্যাডভেঞ্চারে সৃষ্টি করে. পাহাড় থেকে নেমে অটো ধরে আমরা চলে গেলাম কাশিপুর রাজবাড়ি. দূরত্ব মাত্র 12 কিমি. যেতে মিনিট কুড়ি সময় লাগে. এককালে কাশিপুর রাজবাড়ি খুব নামডাক ছিল. বিশাল রাজবাড়িটি আজও অক্ষত. আজ ও সে প্রাচীন ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে. রাজ বাড়ির ভিতর প্রবেশ করার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি. কেবলমাত্র দুর্গাপূজার সময় রাজবাড়ী জনগণের জন্য খোলা থাকে. কাশীপুরে একটি দোকানে  দুপুরের খাবার খেলাম. তখন প্রায় বিকেল হয়েছে এসেছে. টোটো করে ফিরে এলাম আদ্রা স্টেশন. সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় আমাদের ট্রেন. অপেক্ষা করতে লাগলাম স্টেশনে. গোধূলির আলোয় জয়চন্ডী পাহাড়কে অপূর্ব লাগছিল.


কিভাবে যাবেন--- জয়চন্ডী পাহাড় যাওয়ার জন্য নামতে হবে আদ্রা স্টেশন এ. হাওড়া থেকে পুরুলিয়া গামি যে কোন ট্রেন ধরতে পারেন. স্টেশন থেকে জয়চন্ডী পাহাড় যাওয়ার জন্য টোটো বা অটো ভাড়া করতে হবে. সারাদিন ঘোরাঘুরি করে রাত্রিবেলায় চক্রধরপুর - হাওড়া ট্রেন ধরতে পারেন. হাতে দু একদিন সময় থাকলে হোটেলে  থেকে ঘুরে আসতে পারেন বড়ন্তি লেক, মাইথন ড্যাম, কল্যাণেশ্বরী মন্দির, পাঞ্চেত ড্যাম, গড় পঞ্চকোট. ঘুরে আসতে পারেন অযোধ্যা পাহাড়.


কোথায় থাকবেন.... একদিনের মধ্যে জয়চন্ডী পাহাড় ঘুরে আসা সম্ভব. যদি কাছাকাছি দর্শনীয় স্থানগুলি দেখার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে থাকতে পারেন আদ্রা বা রঘুনাথপুরে. এখানে থাকার জন্য ছোট বড় বিভিন্ন বাজেটের লজ বা হোটেল পেয়ে যাবেন. এছাড়া জয়চন্ডী পাহাড় এর নিচে যুব আবাসন কেন্দ্র আছে. তবে এখনকার বাজেট একটু বেশি.

    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ