পুজোতে বেড়িয়ে আসুন-- বাঁকুড়ার স্কটল্যান্ড "তালবেড়িয়া ড্যাম" ( Talberia Dam)
শ্রাবণ মাসের শেষ রবিবার. কয়েকজন বন্ধু মিলে বেরিয়ে পড়লাম অজানা এক পর্যটন কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে. গন্তব্য বাঁকুড়ার স্কটল্যান্ড তালবেড়িয়া ড্যাম. অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ তালবেরিয়া ড্যাম এখনো ভ্রমন পিপাসু মানুষের কাছে সেই ভাবে পরিচিতি লাভ করেনি. তালবেড়িয়া ড্যামের কথা এর আগে কয়েক জনের শুনেছি কিন্তু যাওয়া হয়নি তাই এবার সুযোগ পেতে তালবেরিয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম. ঘোর বর্ষা তাই রেন কোট,ছাতা, সঙ্গে নিয়ে নিলাম. ঘর থেকে বের হতে বেরোতে আটটা বেজে গেল. কিছু দূর গিয়ে নাকাইজুরি যেই পৌঁছেছি এমন সময় ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো. পথের ধারে এক চা দোকানে সাময়িক বিরতি নিলাম. গরম চা আর গরম বেগুনির সাথে বর্ষার মজা উপভোগ করা সত্যিই আলাদা অনুভূতি. বৃষ্টি থামতে আবার পথ চলা শুরু হল. ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম শিবডাঙ্গার মোড়. শিবডাঙ্গা মোর নামটা শুনলে শরীর শিহরিত হয়ে ওঠে। একসময় এখানে প্রতিদিন রাতে বেলায় ডাকাতি হত, এখন অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টেছে. দু পাশে শাল ,সেগুন, পিয়াল এর জঙ্গল । আর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে চলে গেছে রাস্তা। ঝিলিমিলি পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে দশটা বেজে গেল। ঝিলিমিলি থেকে তালবেরিয়া ড্যাম এর দূরত্ব মাত্র 4 কিমি। ঝিলিমিলিতে হালকা করে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম।
Picture source facebook |
ফাইনালি আমরা পৌঁছে গেলাম তালবাড়িয়া ড্যাম। তিন দিক পাহাড়বেষ্টিত ড্যামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যি অসাধারণ . ভ্যামটির আয়তন যথেষ্ট বড় আর জল নীল ঘন. স্থানীয় স্থানীয় মানুষের সাথে কথা জানতে পারলাম বাম আমলে এই বাঁধটি নির্মাণ করা হয়েছিল। বর্তমানে এটি বাঁকুড়া জেলার একটি জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট হয়ে উঠেছে .শীতকালে বহু মানুষ পিকনিক করতে আসেন . প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে এখানে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগেই থাকে. ড্যামটি কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষেরা এখানে কুঠির শিল্পের পসরা সাজিয়ে বসেন .ড্যাম কে কেন্দ্র করে স্থানীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। ড্যামের চারপাশে পাকা রাস্তা চলে গেছে এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে, মাঝখানে লকগেট .নৌকা বিহারের ব্যবস্থা আছে. মাথাপিছু ৫০ টাকার বিনিময়ে এক ঘন্টা এর আনন্দ উপভোগ করা যায়। ড্যামের যেদিকেই তাকানো যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ। ড্যামের ধারে বসে নিশ্চিন্তে ঘণ্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়ে দেয়া যায়। এখানকার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য অসাধারণ। ড্যামের পাশে শাল সেগুনের বন থেকে বিভিন্ন পাখির ডাক ভেসে আসে ,যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। ড্যামের আশেপাশে কয়েকটি আদিবাসী গ্রাম রয়েছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও শান্ত সেখানকার পরিবেশ। সন্ধ্যাবেলায় আদিবাসী নৃত্যের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন.
Picture source facebook |
কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান----
1) মুকুটমণিপুর
2) ঝিলিমিলি
3) সুতান
4) মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর
5) পাঁচমুড়ার বৃন্দাবন মন্দির
কখন যাবেন---- গ্রীষ্মকাল বাদে বছরের যে কোন সময় যাওয়ার পক্ষে উপযুক্ত. গ্রীষ্মকালে বাঁকুড়া জেলায় প্রচন্ড গরম পড়ে .৪৭-৪৮ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠে যায়। গ্রীষ্মকালে ওখানে জলের প্রচন্ড কষ্ট। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে ড্যামের জল আনেকটাই শুকিয়ে যায় । ফলে ড্যাম এর সৌন্দর্য সেভাবে উপভোগ করা যায় না ।শীতকাল বা বর্ষাকাল এখানে আসার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। বর্ষার সময় এখানে এলে ড্যাম জলে পুরো পরিপূর্ণ থাকে এবং আশেপাশের বনাঞ্চল সবুজে সবুজ হয়ে থাকে। সেই সময় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই মনমুগ্ধকর.
কোথায় থাকবেন ---- তালবেরিয়া বাঁকুড়ার একটি অপরিচিত পর্যটন কেন্দ্র। টুরিস্ট দের কাছে এটি এখনো সেই ভাবে পরিচিতি লাভ করেনি। এই কারণেই এখানে কোন এখনো হোটেল বা লজ গড়ে উঠেনি। আপনাকে ঝিলিমিলি, বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুরে থাকতে হবে.
কি ভাবে যাবেন ---- হাওড়া থেকে আদ্রা আগামী যে কোন ট্রেনে করে নেমে পড়ুন বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুর স্টেশন এ।সেখান থেকে ঝিলিমিলি যাবার প্রচুর বাস পাওয়া যায়। ঝিলিমিলি থেকে ড্যাম এর দূরত্ব মাত্র 4 km। ঝিলিমিলি থেকে টোটো ভাড়া করে ড্যাম অতি সহজে চলে যেতে পারেন।
0 মন্তব্যসমূহ