বড়ন্তি লেকে একদিন (Baranti Lake)
বাড়ির সামনে এত সুন্দর যে একটি বেড়ানোর জায়গা আছে তা এখানে না এলে কখনো জানতেই পারতাম না. অনেকের মুখে বড়ন্তি লেকের সৌন্দর্যের কথা শুনেছিলাম. জানুয়ারি মাসের প্রথম রবিবার দুই বন্ধু মিলে বড়ন্তি উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম. খড়গপুর আসানসোল প্যাসেঞ্জার ট্রেন যখন বিষ্ণুপুর স্টেশনে দাঁড়ালো তখন সকাল আটটা বেজে দশ মিনিট. সিট পাব কিনা চিন্তায় ছিলাম, কারণ এই ট্রেনটি খুবই ভিড় হয়. কিন্তু দেখলাম প্ল্যাটফর্ম যেমন ফাঁকা ঠিক তেমনি ট্রেন ও ফাঁকা. করোনা পরিস্থিতির জন্য এই হাল. তার উপর রবিবার ছুটির দিন. অফিস যাত্রীদের ভিড় নেই. জানলা দিয়ে ফুরফুর করে ঠান্ডা বাতাস আসছে. মিঠে রোদে ঠান্ডা বাতাস ভালই লাগছিল. আদ্রা স্টেশনে ট্রেন বেশকিছুক্ষণ দাঁড়ায়. হকার বা কোন খোলা দোকান চোখে পড়লো না. বাধ্য হয়েই স্টেশনে বাহির থেকে খাবার আনতে হল. ট্রেনের মধ্যে টিফিন করে নিলাম. কিছুদূর যেতেই দেখতে পেলাম জয়চন্ডী পাহাড়. কুয়াশা মাখা জয়চন্ডী পাহাড় ট্রেনের ভিতর থেকে অসাধারণ লাগছিল. বড়ন্তি লেকে যাওয়ার জন্য আমাদের নামতে হবে মুরাডি স্টেশনে. মুরাডি স্টেশনে ট্রেন যখন থামল তখন প্রায় দশটা বাজে. স্টেশন থেকে লেকের দূরত্ব প্রায় 5 কিলোমিটার. রিক্সা বা ছোট গাড়ি একমাত্র ভরসা. একটা রিক্সায় আমরা চেপে বসলাম.
লাল মাটির পথ ধরে আমাদের রিকশা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল. রাস্তার দু'পাশের সাল সেগুনের জঙ্গল. মিনিট কুড়ির মধ্যে আমরা লেকের সামনে এসে পৌছালাম. চারিদিকে পাহাড়বেষ্টিত লেকের সৌন্দর্য অসাধারণ. মুরাডি পাহাড় ও বড়ন্তি পাহাড়ের মাঝে বড়ন্তি লেক. এই হদ টির দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার. সেচ প্রকল্পের একটি ড্রাম বড়ন্তি লেক. পাহাড় বেষ্টিত লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরূপ. চারপাশে সাল, সেগুন, তমাল ও পলাশের ঘন জঙ্গল. এত সুন্দর একটি জায়গা অবহেলায় পড়ে রয়েছে দেখে খুব কষ্ট হয়. সঠিক পরিকল্পনা নেয়া হলে এটি একটি জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পট হয়ে উঠবে. আগে মাওবাদীদের ভয়ে এখানে লোকজনের আসা যাওয়া খুব একটা ছিল না. এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে. সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এখন পর্যটকদের আনাগোনা দিন দিন বাড়ছে. লেকের কাছে কয়েকটা বেসরকারি লজ রয়েছে. পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের ইকো ট্যুরিজম রিসোর্ট ও আছে. এখানে থাকা খাওয়ার সু-ব্যবস্থা রয়েছে. বড়ন্তি এসে আপনি যদি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত না দেখেন তবে আপনার বড়ন্তি আসার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ. বড়ন্তি প্রধান আকর্ষণ লেকের ধারে পাহাড়ের মধ্য দিয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য. এই সময়কার লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপরিসীম. সূর্যোদয়ের সময় সূর্যের লাল অভাই লেকের জল রঙিন হয়ে ওঠে. এই লেকে প্রচুর মাছ আছে দেখতে পেলাম. স্থানীয় কিছু মানুষকে লেকের ধারে মাছ ধরতে দেখলাম. এখানে মাছ ধরার কোনো বিধিনিষেধ নেই. পর্যটনের মৌসুম হওয়ায় অনেক মানুষ এখানে পিকনিক করতে এসেছে. কখন যে সাড়ে বারোটা বেজে গেছে বুঝতে পারিনি. একটা ভালো জায়গা দেখে শানের জন্য নেমে পরলাম. লেকের পাড় পাথর দিয়ে বাঁধানো. খুব সাবধানে নামা দরকার না হলে বিপদ ঘটতে পারে. লেকের জল যেমন স্বচ্ছ তেমনি ঠান্ডা. এবার মধ্যাহ্নভোজনের পালা.
মধ্যাহ্নভোজন এর জন্য আমরা গেলাম ইকোট্যুরিজম রিসোর্টে. এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তরের অধীনে. বিশাল এলাকা জুড়ে রিসোর্ট টি গড়ে উঠেছে . বেশ সাজানো গোছানো ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন. এখানে একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে. প্রায় 5 তলা উঁচু. এখান থেকে চারপাশের পরিবেশ খুব সুন্দর দেখা যায়. ভাগ্য ভালো থাকলে হরিণের দেখা মিলতে পারে.
খাওয়া-দাওয়ার পর কাছের একটি সাঁওতাল আদিবাসীদের গ্রাম দেখতে গেলাম. ছবির মতো সুন্দর গ্রাম. মাটির বাড়ি গুলি খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন. মাটির দেওয়ালে বিভিন্ন ফুলের আলপনা আঁকা. খেজুর গাছের সারি গ্রাম গুলি কে আরো আকর্ষন করে তুলেছে . রাত্রিবেলায় আদিবাসী মেয়েদের নাচ গান উপভোগ করতে পারেন. বসন্তকালে এলে দেখতে পাবেন লাল পলাশ ফুলে চারিদিক আগুনরাঙা.
কিভাবে যাবেন... ট্রেনে করে আপনি কলকাতা থেকে দুই ভাবে আসতে পারেন. একটি খড়গপুর আদ্রা হয়ে অন্যটি আসানসোল হয়ে. খড়গপুর হয়ে এলে রূপসী বাংলা, শালিমার বা যে কোন ট্রেনে আদ্রা স্টেশনে নামতে হবে. সেখান থেকে আসানসোল গামী ট্রেনে মুরাডি স্টেশনে নামতে হবে. আর অন্য পথটি হল শিয়ালদা স্টেশন থেকে আসানসোল গামী ট্রেনে আসানসোলে আপনাকে নামতে হবে. সেখান থেকে ট্রেনে বা বাসে মুরাডি স্টেশন. এছাড়া ধর্মতলা থেকে বাসে করে আসানসোল. সেখান থেকে বাসে করে মুরাডি.
কোথায় থাকবেন... বড়ন্তি একটি আদিবাসী গ্রাম. পরিকাঠামো খুব একটা উন্নত নয়. তবে বর্তমানে কয়েকটি বেসরকারি লজ তৈরি হয়েছে আর আছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ইকো ট্যুরিজম রিসোর্ট.
1 মন্তব্যসমূহ
Very good Post
উত্তরমুছুন