Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

Responsive Advertisement

বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন-- গনগনি

 "বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন"-- গনগনি


মকর সংক্রান্তির দিন সকাল বেলায"় বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন "দেখার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম. ঘরের কাছে পশ্চিম মেদিনীপুরের গরবেতা এত সুন্দর একটি জায়গা আছে অনেকেরই অজানা. বিষ্ণুপুর থেকে গরবেতা দূরত্ব মাত্র 28 কিমি .গনগনি যাওয়ার সবচেয়ে ভাল ও সস্তা মাধ্যম হলো ট্রেন. কিন্তু করোনা অবহে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হওয়াই ়. বাইকে করে বেরিয়ে পড়লাম গনগনির উদ্দেশ্যে. শীতের ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে মেখে যেতে বেশ ভালই লাগছিল. ঠান্ডা বাতাসে মাঝে মাঝে বেশ কপনি দিচ্ছিল. জাঁকিয়ে শীত পড়ায় জ্যাকেট -টুপি পড়ে গিয়েছিলাম. সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলাম. কিছুদুর যাওয়ার পর পথের ধারে একটি চা দোকানে গরম গরম বেগুনি সহ চা বেশ ভালই লাগলো. রাস্তা দিয়ে একদল গ্রামের মেয়ে চৌডাল নিয়ে টুসু গান করতে করতে চলেছেন. শীতের সকালে গ্রাম্য সুরে টুসু গান শুনতে বেশ ভালই লাগছিল. সকাল সকাল বেরিয়ে পড়া উদ্দেশ্যই ছিল টুসু পরব দেখা.

ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম গরবেতা. গরবেতা স্টেশন থেকে গনগনি মাত্র 4 কিমি. কলেজ মোড় থেকে গনগনি মাত্র 1 কিমি. কলেজ মোড় থেকে লালমাটির রাস্তার দু'পাশে কাজুবাদামের জঙ্গল পেরিয়ে গনগনির মাঠ. গ্রীষ্মকালে গনগনে হলকা প্রবাহের জন্য জায়গাটির নাম হয়েছে গনগনি. সুন্দর বানানো সিঁড়ি বেয়ে নামা যায় একেবারে গর্তে . গনগনি কে " বাংলা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন "বলা হয়. শিলাবতী নদী তার চলার পথে অসাধারণ সুন্দর ভূমিরূপ সৃষ্টি করেছে. নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে মনে হবে কোথাও গুহা, কোথাও কোনো বন্য প্রাণীর মুখ, ় কোথাও পাহাড় আর কত কি? স্থানীয় ও নিকটবর্তী মানুষের আদর্শ পিকনিক স্পট হলো এই গনগনি. মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে দেখলাম প্রচুর মানুষ এখানে পিকনিক করতে এসেছে. পিকনিক পার্টির  থার্মোকলের থালা , আবর্জনা এত সুন্দর একটি জায়গা কিভাবে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দেখলে খুবই কষ্ট হয়. স্থানে স্থানে প্লাস্টিকের কাপ , বাটি, কাচের বোতল পড়ে থাকতে দেখে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল. গণগণিতে পাড়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য সত্যিই অসাধারণ. এখানে আপনি একদিন থাকলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সুন্দর্য উপভোগ করতে পারেন. সূর্যোদয় দেখার সুযোগ না থাকলেও সূর্যাস্ত দেখবো বলে মনস্থির করলাম. মহাভারতের সাথে গনগনির নাম জড়িত. এইখানে নাকি বকাসুরের গুহা, যাকে ভীম বধ করেছিলেন. আবার চুয়ার বিদ্রোহের নিরব ইতিহাসের সাথে গনগনির নাম জড়িত.


গনগনির কাছে আছে মা সর্বমঙ্গলা প্রাচীন মন্দির. বগরি মহারাজা নৃপতি সিং এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন. দেবী দুর্গা এখানে সর্বমঙ্গলা রূপে পূজিত হন. দেবী মূর্তি টি ব্যাসল্ট পাথর দিয়ে তৈরি. মন্দিরটি উড়িয়া স্থাপত্যের অসাধারণ নিদর্শন. গুনগুনি ঘুরতে এসে সর্বমঙ্গলা মন্দির পরিদর্শন এককথায় উপরি পাওনা.

কিছুদূর গেলে দেখতে পাওয়া যাবে রায় কটার দুর্গের ধ্বংসাবশেষ. ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে  এই দুর্গটি নির্মিত হয়েছিল. উড়িয়া স্থাপত্যের এক উজ্জ্বল নিদর্শন এই রায় কোঠা দুর্গ. এখন যা অবশিষ্ট রয়েছে তা ধ্বংসাবশেষ ছাড়া আর কিছুই নয়. প্রাচীন ইতিহাস কে দেখার সুযোগ পেয়ে ভালো লাগলো. এবার বাড়ি ফেরার পালা.


কিভাবে যাবেন-- ট্রেনে করে খুব সহজেই গনগনি যাওয়া যায়. নিকটবর্তী রেলস্টেশন গরবেতা. হাওড়া থেকে রূপসী বাংলা, শালিমার বা যে কোন লোকাল ট্রেনে গরবেতা স্টেশনে নামতে হবে. স্টেশন থেকে গনগনি রিক্সা বা অটোই যাওয়া যায়. এছাড়া বিষ্ণুপুর থেকে ও গরবেতা যাওয়া যায়. মেদিনীপুর, বাঁকুড়া বিষ্ণুপুর থেকে গরবেতা যাওয়ার প্রচুর বাস চলে.


কোথায় থাকবেন.... গরবেতা স্টেশন থেকে মাত্র 3 কিমি দূরে কলেজ মোড় এর কাছে শ্যাম সংঘ আশ্রম. সব রকমের থাকার ঘর এখানে পাওয়া যায়. 150 টাকা থেকে ভাড়া শুরু. বেশ  শান্ত পরিবেশ. এখানে থাকলে সন্ধ্যা আরতি দর্শন করতে পারেন.

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ