ধুপঝোরার গাছবাড়িতে একটি দিন
গভীর অরণ্যের মাঝে কোন গাছ বাড়িতে কখনো রাত কাটিয়েছেন কি? শীতের রাতে নিঝুম সেই ঘরে বাসের অভিজ্ঞতা কেমন হবে বুঝতে পাচ্ছেন না তো. এক কথায় যদি বলি সেই অভিজ্ঞতা হবে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা . সেই অভিজ্ঞতা আজ আপনাদের কাছে তুলে ধরলাম .
ভোরের কুয়াশা মাখা রেল পথ ধরে এগিয়ে চললো আমাদের ট্রেন. নিউ জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ছাড়িয়ে এগিয়ে চললো আমাদের ট্রেন. দুপাশে গভীর অরণ্য. তখনো পাখিদের ঘুম ভাঙ্গেনি. কখনো চা বাগান, কখনো শ্যামল বনানী, কখনো বা নাম না জানা অজানা পাহাড়ি নদী কাটিয়ে এগিয়ে চলল ট্রেন. নিউ মাল জংশন এ যখন আমাদের ট্রেন থামল তখন সকাল নটা.
সবুজ ঢেউ খেলানো চা বাগানের মধ্য দিয়ে আমাদের ভাড়া করা গাড়ি এগিয়ে চলল. রঙিন পোশাক পরা স্থানীয় মহিলারা চা পাতা তুলে পিঠে বাধা ঝুড়িতে রাখছে. রাস্তার দু'পাশে কখনো শাল সেগুন গ্রামারের গভীর জঙ্গল. আমাদের গন্তব্য গোরুমারা জাতীয় উদ্যান.
ঘণ্টাখানেকের মধ্যে আমরা পৌছে গেলাম ধুপঝোরা এলিফ্যান্ট ক্যাম্পে. এই ক্যাম্পে আছে ছটি কটেজ আরেকটি গাছবাড়ি. বিশাল শাল গাছের উপর বাঁশ দিয়ে নির্মিত কটেজ, নাম তিস্তা. একদিকে গভীর অরণ্য অন্যদিকে শ্যামল চা বাগান তার মাঝে এই গাছবাড়ি. সেই গাছ বাড়ির বারান্দায় বসে চা বাগান আর গভীর অরণ্যের শোভা দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে যাবে আপনি বুঝতে পারবেন না. দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর গাইড আমাদের নিয়ে গেলেন কাছের মূর্তি নদীর ধারে. নদীতে হাতিদের স্নান করানো চলছে. হাতিদের স্নান করানো সে এক এলাহি ব্যবস্থা. এলিফ্যান্ট ক্যাম্পে পাঁচটি হাতি আছে . তাদেরই স্নান করানো হয় মূর্তি নদীতে. ইচ্ছে করলে আপনি নিজে হাতে হাতিদের খাওয়াতেও পারেন. নদীর স্বল্প জলে হাতিদের স্নানের দৃশ্য সত্যিই উপভোগ্য.
হাতির পিঠে চেপে জঙ্গল সাফারির ব্যবস্থা করা হয় বিকালে. একটি হাতিতে 3 জন বসতে পারে. হাতির পিঠে চেপে আমরা গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করলাম. হাতির পিঠে চ াপার অভিজ্ঞতা আগে ছিল না. তাই হাত পিঠে সওয়ার করতে বেশ ভালো লাগছিল. গভীর অরণ্যে ওয়াচ টাওয়ারের সামনে এসে দাড়ালো হাতি. এখানে সাময়িক বিরতি. এই ওয়াচ টাওয়ার থেকে আপনি চারপাশের জঙ্গল দেখতে পারেন. সামনে রয়েছে একটি সল্ট লিংক. বন্য জন্তুর দল মাঝে মাঝে এখানে নুন খেতে আসে. ভাগ্য ভালো থাকলে আপনি দেখা পেতে পারেন গন্ডার, গাউর. ময়ূর বা বাইসনের. কানে ভেসে আসে নানা পাখির ডাক. ধীরে ধীরে অন্ধকার নেমে আসে জঙ্গলের বুকে.
কটেজে ফিরে গরম গরম বেগুনি আর চা খেতে খেতে আদিবাসী মেয়েদের নাচ গান দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে গেল জানতে পারলাম না. গরম গরম মুরগির মাংস আর রুটি দিয়ে ডিনার সারলাম. খাওয়া দাওয়ার পরে গাছ বাড়ির ব্যালকনিতে এসে বসলাম. আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ. জ্যোৎস্না আলোয় চারিদিক ভেসে যাচ্ছে. দূরে শোনা যাচ্ছে বন্য জন্তুদের নানা আওয়াজ. গাছ বাড়িতে রাত্রিযাপনের সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা. ক্যাম্পের হাতির ডাকে খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো . এবার ফেরার পালা.
কিভাবে যাবেন... কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস, তিস্তা তোষা এক্সপ্রেস , দার্জিলিং মেল, উত্তর বঙ্গ এক্সপ্রেস যে কোন ট্রেনে চেপে নামতে হবে নিউ মাল জংশন. সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে ধুপঝোরা এলিফ্যান্ট ক্যাম্প. নিউ জলপাইগুড়ি থেকেও ধুপঝোরা আসা যায়.
কোথায় থাকবেন... ধুপঝোরা এলিফ্যান্ট ক্যাম্পে 6 টি কটেজ আর একটি গাছ বাড়ি আছে. থাকা-খাওয়া , জঙ্গল সাফারি, আদিবাসীদের নিত্য -প্যাকেজের মধ্যে ধরা থাকে. একদিনের খরচ আনুমানিক জনপ্রতি টাকা. গাছ বাড়িতে থাকার জন্য আগে থেকে বুকিং করে আসা দরকার.
0 মন্তব্যসমূহ