Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

Responsive Advertisement

ভারতের পরিষ্কারতম শহর ইন্দোর (India's Cleanest City Indore)

 ভারতের পরিষ্কারতম শহর  ইন্দোর (India's Cleanest City Indore) -


  শিপ্রা এক্সপ্রেস যখন ইন্দোর স্টেশনে ঢুকলো তখন রাত প্রায় দুটা. স্টেশনের ডরমেটরির রুম বুক করা ছিল. জামা কাপড় চেঞ্জ করে শুয়ে  পড়লাম .শরীর খুব ক্লান্ত. তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম. ঘুম ভাঙলো সকাল ছটায়. তখনও চারিপাশ অন্ধকার. ইন্দরে সূর্যোদয় হতে একটু দেরি হয়. চোখের চিকিৎসার জন্য মাঝে মাঝেই আমাকে ইন্দোর আসতে হয়. এর আগে ইন্দোর শহরটি সেভাবে ঘোরার সময় হয়নি. তাই এবার একটু সময় নিয়ে বাড়ি ফেরার টিকিট কেটে ছিলাম. উদ্দেশ্য শহরটি একটু ঘুরে দেখা. ইন্দোর শহরটি বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন. সেজন্যই স্বচ্ছ ভারত অভিযানে ইন্দোর চার চারবার প্রথম স্থান দখল করেছে. এখানে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে .


রাজওয়াড়া প্রসাদ(Rajwada Place) .... ইন্দোর এর দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে রাজপ্রাসাদ অন্যতম. ইন্দুরের বিখ্যাত কাজুরি মার্কেটের কাছে অবস্থিত এই প্রসাদ.  1474 খ্রিস্টাব্দে হলকার রাজ মলহার রাও হলকার এই প্রসাদ নির্মাণ করেন. এই প্রাসাদটি সাত তলা.প্রাসাদটির নিচে তিনতলা পাথর দিয়ে তৈরি আর উপরের চারতলা কাঠ দিয়ে তৈরি..প্রাসাদটির পিছনে একটি সুন্দর বাগান আছে. বাগানে একটি সুন্দর ঝরনা আর একটি কৃত্তিম  জলপ্রপাত আছে..প্রাসাদটির হলঘর আট প্রদর্শনীর জন্য ব্যবহৃত হয়. পাসাদে প্রবেশ করার জন্য 10 টাকার টিকিট কাটতে হয়.


শীষ মহল (Kachh  Mohal) .... বিভিন্ন রংয়ের  কাঁচ দিয়ে তৈরি এই মহলটি আসলে একটি জৈন মন্দির. 100 বছরের পুরনো এই প্রাচীন মন্দির টি শহরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত. মন্দিরের সিলিং , দেওয়াল এবং স্তম্ভ গুলিতে রংবেরঙের কাঁচের টুকরো লাগানো. মন্দিরটি ছোট হলো খুব সুন্দর দেখতে. এখানে ছবি তোলার নিষিদ্ধ.


লালবাগ প্যালেস (Lalbag place) .... ইন্দোর এর দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম লালবাগ প্যালেস . 1886 - 1921 সালের মধ্যে মহারাজা শিভাজি রাও হলকার নির্মাণ করেন. তিনতলা বিশিষ্ট এই প্রাসাদটি হলকার স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন. প্রধান ফটক টির সাথে বাকিংহাম প্রাসাদে মিল রয়েছে.


জাদুঘর (Museum) ... পুরাতত্ত্ব সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এর জন্য 1929 সালে জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠিত হয়. জেনারেল পোস্ট অফিসের কাছে রয়েছে এই জাদুঘরটি. এখানে দুটি গ্যালারি রয়েছে. বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন এখানে রাখা রয়েছে. প্রতিদিন সকাল 10 টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে( সোমবার বন্ধ)


কৃষ্ণবাই হলকার ছত্রী (Krishnabai Holkar Chatri) ... ইন্দোর এর ঐতিহাসিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে অন্যতম কৃষ্ণবাই হলকার ছত্রী. আঠারোশো খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে এটি নির্মিত হয়. ফুলকার রাজবংশের সদস্যদের সম্মান জানানোর জন্য এটি নির্মাণ করা হয়. ইন্দোর শহরে মার্কেট এর কাছে এটি রয়েছে. সত্যজিৎ রায়ের কারুকার্য সত্যিই দেখার মতো. স্মৃতিসৌধটির চারিদিকে রয়েছে যুদ্ধরত সৈন্যদের মূর্তি. হোলকার রাজ মালহার রাও  হোলকার এর মা কৃষ্ণ বাই হলকারের নামে এটি উৎসর্গকৃত. এখানে একটি সুন্দর বাগান আছে.


কমলা নেহেরু পানি সংগ্রহশালা/ চিড়িয়াখানা (Kamala Nehru Prani Sangrahalaya/Zoo)-ইন্দরে এসে যদি আপনি চিড়িয়াখানা না যান তবে আপনি অনেক কিছুই মিস করবেন. এটি ইন্দোর এর দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম.1974 সালে নির্মিত হয়. বর্তমানে এই চিড়িয়াখানাটি 52 একর জমি নিয়ে নিয়ে বিস্তৃত. বিভিন্ন জাতের প্রাণী ও পাখি এখানে রয়েছে যাদের পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে আনা হয়েছে. এখানে এলে দেখতে পাবেন সাদা বাঘ ,রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সাদা ময়ূর, হিমালয়ান ভালুক, ব্ল্যাকবক্স, নীলগাই , মিশরীয় সুকুন, বিভিন্ন প্রজাতির লাভ বার্ড, এশিয়াটিক সিংহ , নানা প্রজাতির বনবিড়াল. এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিষাক্ত সাপ. রয়েছে প্রজাপতি পার্ক ও শিশুদের পার্ক. সকাল ন'টা থেকে বিকেল ছয়টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা খোলা থাকে. তবে সোমবার সম্পূর্ণ বন্ধ. চিড়িয়াখানা টি বিশাল ঘুরতে ঘুরতে কখন যে সময় কেটে যাবে আপনি জানতে পারবেন না


খাজরানা গণেশ মন্দির( Khajrana Ganesh Temple ).....1735 সালে  হলকার  রাজবংশের মহারানি অহল্যা বাই হলকার গণেশ মন্দিরটি নির্মাণ করেন. ইন্দোর শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই গণেশ মন্দির হিন্দুদের অন্যতম তীর্থস্থান. মন্দিরটি গনেশকে উৎসর্গকৃত. মন্দিরটি খুবই জাগ্রত. লৌকিক ধারণা অনুযায়ী এই মন্দিরে  সুতো পাগলী নাকি মনোবাসনা পূর্ণ হয়. প্রতিদিন শত শত ভক্ত এই মন্দিরে প্রার্থনা করতে আসেন. গণেশ মন্দির হল এখানে রাম সীতা ও অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে.


অটল বিহারী  বাজপেয় আঞ্চলিক উদ্যান ( Atal Bihari Bajpeyee Regional Park) .... দর্শনীয় জায়গা গুলির মধ্যে  অটল বিহারী  বাজপেয় আঞ্চলিক উদ্যান অন্যতম.2000 সাল  প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী  বাজপেয় এই  উদ্যান  টি উদ্বোধন করেন. সেই জন্য এটি  অটল বিহারী  বাজপেয় আঞ্চলিক উদ্যান নাম দেওয়া হয়.80  একর জমি নিয়ে এই বিশাল পার্টি গড়ে উঠেছে. পার্কের চারদিকে একটি খাল রয়েছে তাতে নৌবিহারের ব্যবস্থা রয়েছে. এখানে বিভিন্ন আধুনিক উপকরণ রয়েছে. রয়েছে মিউজিক ফোয়ারা, লেক ভিউ পয়েন্ট, ফাস্টফুড জন, আর্ট গ্যালারি, জাম্পিং জেড ফোয়ারা

চপ্পান দুকান/56 দোকান (56 Shop Street) -- ইন্দরে এসে আপনি যদি এখানকার সুস্বাদু খাবার না Test করেন তবে অনেক কিছুই আপনি মিস করবেন. ইন্দরে বিখ্যাত 56 দোকান এখানকার street food জন্য বিখ্যাত. এখানে পরপর 56 টি দোকান আছে. এখানকার দই বড়া, পোহা, জিলিপি, বিভিন্ন ধরনের নোনতা বিখ্যাত.


কিভাবে যাবেন (How To Go) ... ইন্দোর মধ্যপ্রদেশ এর বড় শহর. রেলপথ , সড়ক পথ ও বিমানপথ  এ  ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে এই শহরটি যুক্ত. Shipra এক্সপ্রেসে করে হাওড়া থেকে অতি সহজে ইন্দোর যাওয়া যায়. এছাড়া কলকাতা বিমানবন্দর থেকে বিমান পথে ইন্দোর যাওয়া যায়.

কোথায় থাকবেন ( Where To Stay )....:ইন্দোর  ব্যস্ত শহর. একে মিনি  মুম্বাই ও বলা হয়ে থাকে. এখানে থাকার জন্য ছোট-বড় অনেক হোটেল ও লজ আছে.

    

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ