মুখোশ গ্রাম চড়িদা
( Mask Village Charida)
অযোধ্যা পাহাড়ের নিচে ছোট্ট একটা গ্রাম চড়িদা. ছবির মত আঁকা সুন্দর একটি ছোট্ট গ্রাম. প্রকৃতির বুকে যেন এক টুকরো ক্যানভাস. 150 - 200 পরিবারের বাস গামে. অযোধ্যা পাহাড় আজ পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ভ্রমণপিপাসু মানুষের কাছে একটি পরিচিত নাম . দিনদিন পর্যটকের ঢল এখানে বাড়ছে. অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা অযোধ্যা পাহাড় একসময় মাওবাদী আতঙ্কের ভয় মানুষের কাছে বা়ত্য ছিল . আজ পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে অযোধ্যা পাহাড় ,পাহাড় প্রেমী মানুষের প্রধান আকর্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে . অযোধ্যা পাহাড়ের কাছে এত সুন্দর একটি গ্রাম রয়েছে তা অনেক মানুষই জানেন না. এখানকার অধিকাংশ মানুষের প্রধান জীবিকা মুখোশ বানানো. আর সে কারণে গ্রামটি আজ মুখোশ গ্রাম নামে পরিচিত. প্রধানত ছৌ নাচের ব্যবহৃত মুখোশ সেখানে বানানো হয়ে থাকে. বর্তমানে মানুষ এই মুখোশ ঘর সাজানোর কাজেও ব্যবহার করছে. মাটি , তুষ, কাগজ, ময়দা দিয়ে মুখোশ বানানো হয়. প্রায় দেড়শ বছর আগে বাগমুন্ডি জমিদার মদনমোহন সিংহ দেও এই চড়িদা গ্রামে মুখোশ বানানো শুরু করিয়েছিলেন. গ্রামে প্রবেশ করলে দেখা যায় রাস্তার দু'পাশে সারি সারি মুখোশের দোকান. সেখানে মুখোশ বানানোর সাথে সাথে মুখোশ বিক্রিও করা হয়. প্রতি বছর জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে এইখানে ছৌ উৎসব হয়. ছৌ নাচের মাধ্যমে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী কে তুলে ধরা হয়. ছৌ মুখোশ আজ দেশে বিদেশে ঘর সাজানোর সামগ্রী হিসেবে সমাদ্রিত. চড়িদা গ্রামে ছৌ মুখোশের একটি মিউজিয়াম আছে. এখানে এলে বিভিন ছৌ মুখোশ দেখার পাশাপাশি ছৌ নাচের ইতিহাস জানতে পারবেন.
চড়িদা গ্রামটি খুবই শান্ত নিরিবিলি. গ্রামের প্রধান রাস্তার দুপাশে সারি সারি মুখোশের দোকান. বাড়ির ছেলে মেয়ে সকলে মুখোশ তৈরিতে যুক্ত. গ্রামটি ছোট হল ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর দেখতে. গ্রামের মানুষজন শান্ত ও খুবই পরিশ্রমি. মুখোশ কে কেন্দ্র করে গ্রামের আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে. অযোধ্যা পাহাড় ঘুরতে আসা মানুষ এখানে এসে মুখোশ কিনে নিয়ে যান.
সীতাকুণ্ড(Sita Kundu) .. চড়িদা গ্রাম থেকে কিছু দূরে রয়েছে সীতাকুণ্ড. পুরান থেকে জানা যায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দেবার জন্য সীতা এই স্থানে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে. তখন প্রভু রামচন্দ্র তীর দিয়ে মাটি খুঁড়ে জল বের করে সীতা তৃষ্ণা নিবারণ করেছিলেন. স্থানীয় মানুষের কাছে এই স্থানটি খুবই পবিত্র. এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই সুন্দর.
খয়রাবেড়া ড্যাম ( Khairabera Dam) .... চড়িদা থেকে মাত্র 11 কিমি দূরে রয়েছে খয়রাবেড়া ড্যাম . সেখান থেকেও ঘুরে আসতে পারেন. এটি একটি সেচ বাঁধ. এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ্য. এখানকার পরিবেশ খুবই শান্ত নিরিবিলি. দু'ধারে দুটি পাহাড় আর মাঝখানে ড্যাম. ডামটি প্রায় দেড় কিলোমিটার লম্বা. ড্যামে কাছে রয়েছে খয়রাবেড়া ইকো অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প. এখানে রয়েছে তিনটি কটেজ ও কয়েকটি অত্যাধুনিক ট্রেন্ড. এখানে থাকার এটিই একমাত্র জায়গা. লেকের জল খুবই স্বচ্ছ. লেকের জলে মাছ এ দের বিচরণ ও গাছে গাছে পাখিদের কলরবে শুনতে শুনতে সময় কেটে যাবে.
মুরগুমা ড্যাম (Murguma Dam) .. অযোধ্যা পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠেছে একটি সুন্দর ড্যাম. সাহারজোর নদীর জল কে আটকে এই ড্যাম. নাম মুরগুমা ড্যাম. চড়িদা গ্রাম থেকে দূরত্ব মাত্র 24 কিমি. ড্যাম এর একদিকে অযোধ্যা পাহাড় অন্যদিকে ছোট ছোট টিলা. লেকের জল খুবই স্বচ্ছ. লেকের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ মাথা তুলে রয়েছে. লেকের চারপাশে রয়েছে শাল সেগুন পিয়ালের গভীর জঙ্গল. কোলাহল থেকে দূরে এই শান্ত পরিবেশ ভালো লাগবে.
কখন যাবেন (When To Go) -- গ্রীষ্মকালে এখানে প্রচণ্ড গরম পরে. এই সময় তাপমাত্রা 45 ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যায়. গ্রীষ্মকালে এখানে না আশায় ভালো. তাছাড়া গ্রীষ্মকালে এখানে জলের প্রচন্ড সংকট. তাই শীতকালে বা বসন্তকালে এখানে আশায় সবচেয়ে ভালো সময়. বস ন্তকালে এলে দেখতে পাবেন গাছে গাছে লাল পলাশের সমাহার . যেন গাছে গাছে আগুনের পরশ.
কিভাবে যাবেন (How To Go) --চড়িদা গ্রামে যাওয়ার জন্য আপনাকে নামতে হবে বরাভূম বা পুরুলিয়া স্টেশন. বরাভূম টেশন থেকে চড়িদা গ্রাম 30 কিমি. হাওড়া- চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জার সকালে নামুন পুরুলিয়া টেশনে . সেখান থেকে ভাড়া গাড়িতে অযোধ্যা পাহাড় সহ ্চড়িদা গ্রাম ঘুরে আসতে পারেন. বাসে করেও পুরুলিয়া আসা যায়. সেইখান থেকে বাসে করে বাগমুন্ডি. বাগমুন্ডি থেকে চড়িদা মাত্র 5 কিমি.
কোথায় থাকবেন (Where To Stay) -- চড়িদা গ্রাম থাকার জন্য কোন লজ বা হোটেল নেই. অযোধ্যা পাহাড়ের হিল্টপ এ কোন লজ বা রিসোর্টে থেকে আপনাকে চড়িদা গ্রাম ঘুরে আসতে হবে. না হলে পুরুলিয়া শহরের কোন হোটেল বা লজে থেকেও চড়িদা গ্রাম ঘুরে দেখা যায়.
0 মন্তব্যসমূহ