Ticker

6/recent/ticker-posts

Advertisement

Responsive Advertisement

উড়িষ্যার কাশ্মীর :- দারিংবাড়ি (Daringbadi)

    উড়িষ্যার কাশ্মীর :- দারিংবাড়ি (Daringbadi)

ডিসেম্বরের শুরুতে ঠিক করে ফেললাম বড়দিনের ছুটিতে এবার যাব উড়িষ্যার কাশ্মীর বলে পরিচিত দারিংবাড়ি. যাব বললেই তো হলো না. রাস্তা তো কম  নয় .ট্রেনের টিকিট রিজার্ভেশন না থাকলে খুবই মুশকিল. শীতকালে ভ্রমণ মরসুমে ট্রেনের টিকিট এক মাস আগেও পাওয়া খুবই মুশকিল. বুক করতে গিয়ে দেখলাম কোন টিকিট খালি নেই. A/C  তে  অবশ্য কিছু সিট খালি আছে কিন্তু এসি টিকিট এর দাম খুবই বেশি. আমাদের বাজেট এতো নয়. টিকিট না পেয়ে বেশ হতাশ হলাম. প্ল্যান করতে লাগলাম অন্য কোথাও যাওয়া যায় কিনা? হঠাৎই সন্ধ্যেবেলায় IRTC  সাইটে দেখতে পেলাম হাওড়া যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসে' গটা কয়েক সিট খালি আছে 23 শে ডিসেম্বর. কোনো কারণবশত এই ট্রেন টি দেখাই হয়নি. যা হোক বন্ধুদের ফোন করে তৎক্ষণাৎ ছটি সিট বুকিং করে ফেললাম. যাক এবার অন্তত নিশ্চিত হওয়া গেল কিন্তু বিধি বাম হোটেল লজ কিচ্ছুই খালি নেই . অনেক গুলি হোটেল লজে  ফোন করেও কোন রুম খালি পেলাম না. ভাবলাম টিকিট যখন পেয়েছি তখন যাত্রা কোন ভাবে বাতিল করব না. তাতে যাই হোক. দুশ্চিন্তার মধ্যে দুটো দিন কাটলো . শেষে উড়িষ্যায় আমার এক বন্ধুর সহযোগিতায় সদ্য নির্মিত একটি হোটেলে কোনমতে দুটি রুম খালি পাওয়া গেল. নতুন খুলেছে বলে এদের রেট ও খুব বেশি নয়.


খড়গপুর থেকে আমাদের ট্রেন .22 তারিখ বিকেলের মধ্যে আমরা খড়্গপুরে পৌঁছে গেলাম .রাত্রি 12:40 এ আমাদের ট্রেন .খড়্গপুরে পৌঁছে স্টেশন একটু ফ্রেস হয়ে নিলাম .হাতে কয়েক ঘণ্টা সময় থাকায় আমার বিগ বাজার শপিং মলে ঘুরতে গেলাম. রেল শহর খড়গপুর খুবই ব্যস্ত শহর. বিগ বাজারে কিছুটা সময় কাটিয়ে কিছু  কেনাকাটা করে সাড়ে আটটা নাগাদ আমরা স্টেশনে ফিরে এলাম. স্টেশনের সামনে একটি ছোট্ট হোটেলে আমরা রাতের খাবার খেয়ে নিলাম. রাত্রি দশটার মধ্যে আমরা প্লাটফর্মে পাইছে গেলাম. হাওড়া - যশবন্তপুর এক্সপ্রেস যখন প্লাটফর্মে এলো তখন রাত 12:50 মিনিট .নির্দিষ্ট কামরায়  আমরা উঠে গেলাম . কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে আমরা শুয়ে পড়লাম .খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেল .ব্রাশ করে ফ্রেস হয়ে নিলাম. এক কাপ করে গরম গরম চা খেলাম. ঠান্ডায় গরম চায়ের জুড়ি মেলা ভার. জানলার কাঁচ দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলাম. চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢাকা. দারিংবাড়ির নিকটবর্তী রেলস্টেশন হলো বেরহামপুর .সকাল সাড়ে আটটায় বেরহামপুর স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালো. বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সাজানো-গোছানো স্টেশন. বেশ বড় স্টেশন টি. বেরহামপুর জায়গাটি বেশ বর্ধিষ্ণু. সব রকমের দোকানদারি রয়েছে. ভালো দেখে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে সকালের টিফিন সেরে নিলাম


স্টেশনের বাইরে অনেকগুলি ট্রাভেল এজেন্সি অফিস আছে.  সেখান থেকে একটি ছোট গাড়ি দুদিনের জন্য ভাড়া করে বেড়িয়ে পড়লাম দারিংবাড়ি উদ্দেশ্যে. দূরত্ব প্রায় 120 কিমি প্রায়. সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা .59 নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে গাড়ি ছুটে চলল. দারিংবাড়ি  পৌঁছতে পৌঁছতে বিকেল হয়ে গেল .এই দিকটা পাহাড়বেষ্টিত. দূরে দূরে অনেকগুলি ছোট-বড় পাহাড়. তার কোলে সোনালী শস্যক্ষেত্র. বিঘার পর বিঘা বিস্তৃত ধানক্ষেতে দু এক জন লোক কাজ করছে. অসাধারণ সুন্দর সেই দৃশ্য.


হোটেলে পৌঁছে বুকিং করার রুমে আমরা ঢুকে গেলাম .শরীর খুবই ক্লান্ত. ফেস হয়ে ঘুমিয়ে নিলাম .রাত্রি আটটা নাগাদ বন্ধুরা মিলে শহর ঘুরতে বেড়ালাম. বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা. এই সময় এখানে মাঝেমাঝে তুষারপাত হয়ে থাকে .দেখলাম রাস্তায় হলুদ বালব জ্বলছে. জোরালো কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই .এখানকার বেশিরভাগ মানুষ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী. আগামীকাল বড়দিন  হলেও এখানে বাড়তি কোনো সাজসজ্জা দেখতে পেলাম না. রাত্রি দশটার মধ্যে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়লাম.


পরের দিন খুব সকাল সকাল ঘুম ভেঙে গেল. তারপরে আমরা ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম. ডাইভার আমাদের প্রথমে নিয়ে গেল কফি বাগান দেখতে. টিকিট কেটে ভিতরে ঘুরতে ঢুকতে হয়. বিশাল এলাকাজুড়ে কফি ও গোলমরিচের বাগান. জায়গাটা বেশ শান্ত নিরিবিলি .বাগানের কিছুটা দূরে পাইনের জঙ্গল.

বড় বড় বিশাল পাইন গাছে  এলাকাটি সজ্জিত .অনেককেই দেখলাম এই জঙ্গলে পিকনিক করতে .বেশ সুন্দর জায়গাটা . কিছুটা সময় কাটিয়ে এবার আমরা গেলাম মিঠু বান্ধা ঝরনা দেখতে. দারিংবাড়ি বিশেষ আকর্ষণ এই ঝরনা টি .ডাইভার দু জায়গায় গাড়ি দাঁড় করালেন. এ গুলি  ভিউ পয়েন্ট .এখান থেকে দূরের পাহাড় গুলি অসাধারণ দেখতে লাগছিল. পাহাড়ের গায়ে ছোট ছোট  গ্রাম. পাহাড়ি পথে গবাদি পশু চলে বেড়াচ্ছে. সুন্দর সেই দৃশ্য .দারিংবাড়ি মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল. এখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষিকাজ .একটি খরস্রোতা পাহাড়ি নদী দেখতে পেলাম .ছোট-বড় পাথরের উপর দিয়ে স্বচ্ছ কাঁচের মতো জল কলকল শব্দে বয়ে চলেছে .তার পাশে একটি ছোট কালী মন্দির. এখানে প্রচুর  হনুমান দেখতে পেলাম, তবে এরা পর্যটকদের কোন প্রকার বিরক্ত করেনা. স্থানীয় এক মানুষ আমাদের ক্যামেরা ও জিনিসপত্রের ব্যাগ সাবধানে রাখতে বললেন. এখানকার জঙ্গলে প্রচুর ময়ূর ও ভালুক আছে তবে আমাদের নজরে কিছুই পড়লো না.


অবশেষে আমরা ঝর্ণার সামনে এসে দাড়ালাম. মাঝারি আকারের একটি পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি সশব্দে নিচে পড়ে জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে. অসাধারণ সুন্দর দেখতে ঝর্ণাটি. অনেকগুলি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে ঝর্ণার কাছে পৌঁছাতে হয়. ঝরনার আশেপাশে অনেক পর্যটক দলকে পিকনিক করতে দেখা গেল. ঝর্ণার জল নিচে পড়ে একটি ছোট্ট জলাশয় সৃষ্টি করেছে .অনেকে দেখলাম সেই জলাশয় সাঁতার কাটছে .দারিংবাড়ি আসার সেরা সময় নভেম্বর -ফেব্রুয়ারি  মাস. এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারণ. বড় বড় পাথরের মধ্য দিয়ে ঝরণার জল বয়ে যাচ্ছে. অনেককে দেখলাম সেই পাথরে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে কিন্তু তা খুবই বিপদজনক. যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে. পাথর গুলো খুবই পিছল. দূর থেকে আমরা ঝর্ণার ছবি তুললাম .ঝর্ণার জল বরফের মত ঠান্ডা .কিছুক্ষণ এখানে কাটিয়ে সিঁড়ি বেয়ে আমরা উপরে উঠে গেলাম .এতগুলো সিঁড়ি ভাঙতে  খুবই কষ্ট হচ্ছিল.


বিকালে গেলাম হিলভিউ পার্ক. চারিদিকে পাহাড় দিয়ে এই পার্কটি বেষ্টিত. টিকিট কেটে পার্কে প্রবেশ করতে হয় . দারিংবাড়ি অন্যতম আকর্ষণ এই পার্ক . এখানে বাচ্চাদের মনোরঞ্জনের যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে. রয়েছে বিভিন্ন ধরনের রাইডার. অনেকটা সময় কাটিয়ে ড্রাইভার আমাদের একটা  ভিউ পয়েন্ট নিয়ে গেল .প্রচুর পর্যটকের সমাগম এ জায়গাটি গমগম করছে .

এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অসাধারণ. দুটি পাহাড়ের মাঝে সূর্য অস্ত যাচ্ছে .এক মায়াবী দৃশ্য সৃষ্টি করেছে.  প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য দারিংবাড়ি কে উড়িষ্যার কাশ্মীর বলা হয়ে থাকে .বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে এলাম. কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে ,  কিছু হালকা খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম বেরহামপুর   স্টেশনের উদ্দেশ্যে .রাত্রিবেলায় আমাদের ট্রেন.


কিভাবে যাবে.... সরাসরি দারিংবাড়ি যাওয়ার কোন ট্রেন নেই .নিকটতম রেলস্টেশন হল বেরহামপুর .চেন্নাই গামী যেকোনো  ট্রেন এখানে স্টপেজ দেয় .বেরহামপুর থেকে দারিংবাড়ি দূরত্ব 120 কিমি .সরকারি-বেসরকারি বাস চলে. ভালো হচ্ছে বেরহামপুর থেকে ছোট গাড়ি বুক করে যাওয়া.  কয়েকটি ট্রেনের নাম দিলাম..

1) হাওড়া- মাইসুর এক্সপ্রেস

2) ফলকনামা এক্সপ্রেস

3)করমন্ডল এক্সপ্রেস

4)হাওড়া-যশবন্তপুর এক্সপ্রেস

5) ইস্ট কোস্ট এক্সপ্রেস


কোথায় থাকবেনঃ... দারিংবাড়ি উড়িষ্যা একটি বিখ্যাত টুরিস্ট স্পট .এই সময় প্রচুর পর্যটক এখানে ভিড় করেন. তাই আগের থেকে হোটেল বুক করে আসাই ভালো .নামিদামি সব রকমের সব বাজেটের হোটেল পেয়ে যাবেন .কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হোটেল হল..

1) Nature valley Resort

2) Daringbadi Nature Camp

3)Hotel Utopia

4)Utopia Resort

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ