ইতিহাস ও প্রকৃতির অসাধারণ মেলবন্ধন: অযোধ্যার রাজবাড়ী (Ajodhya Rajbari)
মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর মল্ল রাজাদের আমলের টেরাকোটা মন্দিরের জন্য আজ একটি জগৎ বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র. প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক বিখ্যাত মন্দির পরিদর্শন করতে আসেন. বিষ্ণুপুর শহরের মধ্যে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা মন্দির গুলি দেখে তারা ফিরে যান. বিষ্ণুপুর শহরের আশেপাশে বহু ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা আজও ভ্রমণপিপাসু মানুষের দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে. এরকমই একটি নিদর্শন হল অযোধ্যার জমিদার বাড়ি. স্থানীয় মানুষের কাছে এটি অযোধ্যা রাজবাড়ী নামেও পরিচিত. বিষ্ণুপুর থেকে অযোধ্যা দূরত্ব মেরেকেটে 12 থেকে 15 কিলোমিটার. তবুও এই ঐতিহাসিক স্থান বিষ্ণুপুরের মানচিত্র থেকে বাদ পড়েছে. জমিদার বাড়ি কোথা প্রচার করা হয় তাহলে এটিও একটি জনপ্রিয় পর্যটক কেন্দ্র হয়ে উঠবে. এখানকার জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়বে. আজকে আমরা এই জমিদার বাড়ি কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরব. বিষ্ণুপুর থেকে কিমি 10 সেক দূরে সোনামুখী যাওয়ার পথে পড়ে জয় কৃষ্ণপুর. জয়কৃষ্ণপুর মোড় থেকে বাঁদিকের রাস্তা ধরে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার গেলেই অযোধ্যা গ্রাম. দারকেশ্বর নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম হল অযোধ্যা.
1805 খ্রিস্টাব্দে রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় এই জমিদার বংশে পত্তন করেন. দিন দিন এই জমিদার বংশের আভিজাত্য এবং ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পেতে থাকে. এক সময় এই রাজবাড়ী বা জমিদার বাড়ি যে যথেষ্ট আভিজাত্যের অধিকারী ছিল তা দেখলেই বোঝা যায়. কালের নিয়মে রাজবাড়ী ও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি. রাজতন্ত্রের অবসান ঘটার পর এই সুবিশাল রাজবাড়ী আজ জরাজীর্ণ ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে. সিংহ দুয়ার থেকে রাজবাড়ী সবই আজ ধ্বংসের মুখে. নহবৎখানা, পাইক বরকন্দাজ এর জন্য নির্দিষ্ট ঘর, বিভিন্ন মহল নিয়ে এক সময় অযোধ্যার রাজবাড়ী যে যথেষ্ট জাঁকজমক ছিল বুঝতে অসুবিধা হয় না. বাড়ির বেশিরভাগ অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেলেও এখনও কিছু কিছু জিনিস অক্ষত রয়ে গেছে. রাজবাড়ী ঢোকার মুখে রয়েছে দ্বাদশ শিব মন্দির. এই বারোটি মন্দিরে বারটি শিবলিঙ্গ রয়েছে. মন্দিরটি আজও অক্ষত অবস্থায় বিরাজ করছে. কুল দেবতা রাধা- দামোদর জিউর মন্দির, দুর্গা দালান, নাটমন্দির, রাস মঞ্চ, দোলমঞ্চ, ঝুলন মঞ্চ আজও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে. এই জমিদার বাড়িতে খুব ধুমধাম করে দুর্গাপুজো পালিত হতো, আজও দূর্গোপূজো পালিত হয় তবে আরম্ভর অনেকটাই কমেছে. পুজোর কয়েকটা দিন জমিদার বাড়ি সদস্যরা বাহির থেকে জমিদার বাড়িতে হাজির হন. আগে জমিদার বাড়িতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে যাত্রাপালা, নাটক ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত. তিন দিন ধরে খুব জাঁকজমক করে রাস উৎসব এখানে পালিত হয়. এইসময় যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে. দীর্ঘদিন ধরে এই রীতি চলে আসছে. আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষ এই সময়ে অযোধ্যায় উপস্থিত হয়. জমিদার বাড়ির গিরি গোবর্ধন মন্দিরের স্থাপত্য সত্যিই দেখার মতো. পোড়া ইট দিয়ে মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে.
জমিদার বাড়ির বাইরে ও গ্রামে কিছু প্রাচীন নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে . এরমধ্যে গোস্বামী বাড়ির জনার্দন মন্দিরটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য. এছাড়াও গ্রামে প্রচুর মন্দির রয়েছে. দারকেশ্বর নদীর তীরে ছবির মতন সুন্দর অযোধ্যা গ্রাম. ইতিহাস ও প্রকৃতির এমন মেলবন্ধন সত্যিই খুঁজে পাওয়া মুশকিল.
কিভাবে যাবেন... বিষ্ণুপুর থেকে অযোধ্যা দূরত্ব মাত্র 12 কিমি. বিষ্ণুপুরের কোন হোটেল বা লজে থেকে ফটো বা ছোট গাড়ি ভাড়া করে জমিদারবাড়ি সহজেই ঘুরে আসা যায়. অযোধ্যা জমিদার বাড়ি যাওয়ার আগে নিকটবর্তী ডিহর গ্রামের বাবা ষাঁড়েশ্বর মন্দিরের দর্শন করে আসতে পারেন. বাঁকুড়া থেকে ও অযোধ্যা যাওয়া যায়. বাঁকুড়া থেকে অযোধ্যা দূরত্ব মাত্র 32 কিমি. দুর্গাপুর থেকে অযোধ্যা দূরত্ব মাত্র 50 কিমি. সড়কপথে কলকাতা থেকে দুর্গাপুর হয়েও সহজে অযোধ্যা ঘুরে আসা যায়.
কোথায় থাকবেন....... অযোধ্যায় থাকার জন্য কোন হোটেল বা লজ নেই. নিকটবর্তী বিষ্ণুপুর শহরে প্রচুর হোটেল রয়েছে যেখানে আপনি বিভিন্ন বাজেটের রুম পেয়ে যাবেন.50 কিমি দূরের দুর্গাপুরে ও আপনি থাকতে পারেন.
এইরকমই কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদন.....
1) বাঁকুড়া জেলার পাঁচটি বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র----( Top 5 Most Popular Tourist Spot In Bankura)
2) বকখালির সমুদ্র সৈকতে একদিন(Bokkhali Sea Beach)
3) বৃষ্টি সিক্ত জয়চন্ডী পাহাড়( Joychandi Pahar,Purulia Tour)
0 মন্তব্যসমূহ